ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় জেলায় জেলায় বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে এবং জুলাই আন্দোলনে হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের পরদিনই এ ধরনের ঘটনাকে দেশের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভে তাঁরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় মদদদাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের দাবি জানান। তাঁদের ভাষ্য, হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ চলার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে জুলাই হামলায় জড়িত শিক্ষকদের বিচার শেষ করার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ভবনে তালা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে চলে আসেন এবং সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে রেজিস্ট্রার ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বিক্ষোভ শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ঠিক পরের দিন আমরা দেখতে পেয়েছি জুলাই আন্দোলনের অগ্রনায়ক, ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী কণ্ঠস্বরকে আজকে দিনদুপুরে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। এই ইন্টেরিম সরকার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিচার করতে যে ব্যর্থ হয়েছে, সে ব্যর্থতার একটি নমুনা আজকে আমরা দেখতে পেয়েছি। এ ছাড়া গত বছরের ১৫ জুলাই জাবি ক্যাম্পাসে যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, রক্তাক্ত করেছিলেন তাঁদের বিচার আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।’

জাকসুর সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক আহসান লাবিব জানান, ওসমান হাদির ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জুলাই হামলার সন্ত্রাসীদের বিচার না করা এবং দোষীদের গ্রেপ্তার না করার ফলেই এ ধরনের হামলা হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল শুরু হয়। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরের তালাইমারিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ‘হাদির ওপর হামলা কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আবু সাঈদের অ্যাকশান, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের সময় অনেকে আপস করে গেলেও ওসমান হাদি কখনো করেননি। তিনি সব সময় ভারতীয় আধিপত্য ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, তফসিল ঘোষণার মাত্র এক দিন পরই একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হামলার শিকার হলেন। এতে বোঝা যায় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটা বজায় থাকবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নির্বাচনের তারিখ যেমন নিশ্চিত করেছেন, তেমনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও নিশ্চিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর ফটকে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়ুবুর রহমান, শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দীন মহসিন, শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অবদুল্লাহ আল নোমান। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে বিক্ষোভ–মিছিল
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার মাগরিবের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।
মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে ওসমান হাদির ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এটা আগামী নির্বাচনসহ সামগ্রিকভাবে দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। এ জন্য সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাদির কোনো ক্ষতি হলে নীরব থাকব না। আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব মেনে নেওয়া হবে না।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া সড়ক, বিজয় সড়ক ও দেবদারু সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ সময় তাঁরা ‘হাদি ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘সন্ত্রাস রাজনীতি একসাথে চলে না’, ‘হাদির ওপর হামলা কেন? ইন্টেরিম জবাব চাই’–সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর এ হামলা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকেই গুপ্ত হামলার ঘটনা বাড়ছে। আমরা ইন্টেরিম সরকারকে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানাই।’

মঞ্চের সদস্যসচিব ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, দেশের রাজনীতিতে ওসমান হাদির মতো মানুষের প্রয়োজন। সরকার যে সংস্কারের কথা বলেছিল তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ হাদিকে গুলি করে থাকলে তাদের রাজনীতি কবর দিতে হবে।’

বিক্ষোভ শেষে শহীদ আবু সাঈদ ফটকে হাদির সুস্থতা কামনায় সম্মিলিত দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

জেলায় জেলায় বিক্ষোভ

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় চট্টগ্রাম, ফেনী, খুলনা, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

সন্ধ্যায় বীর চট্টলার ছাত্র-জনতার ব্যানারে চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় বিক্ষেভ মিছিল করা হয়। রাত আটটায় দেওয়ানহাট মোড় থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম নগর দক্ষিণ শাখা।

বীর চট্টলার ছাত্র-জনতার মিছিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা, চট্টগ্রাম নগরের সমন্বয়কারী রিদুয়ান হৃদয়সহ অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইনকিলাব মঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশে এখনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় ফেনীতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য বিক্ষোভ মিছিল করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের খেজুর চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে শুক্রবার বাদ মাগরিব ফেনী শহরের বড় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার ঘুরে খেজুর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির ফেনী জেলা আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব সোহাইমিন তাজিম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হামলা প্রমাণ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতায় বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের পেছনে শক্তিশালী গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে বলেই তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিকেলে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে ইনকিলাব মঞ্চ, এনসিপি, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তারা প্রশাসনকে সময়সীমা দিয়ে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাদিকে গুলি করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

কুমিল্লায় বিক্ষোভ–সমাবেশ। শুক্রবার বিকেলে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক গোলাম সামদানী, এনসিপি কুমিল্লা মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. রাশেদুল হাসান, এবি পার্টির কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক নাহিয়ান।

খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আয়োজনে মশালমিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশ খুলনা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল আহমেদ, খুলনা জেলার সদস্যসচিব তারিকুল ইসলাম (সৌরভ), যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তন্ময়, খুলনা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাইজুল্লাহ শুভ (সিফাত), রুহুল আমিন, রায়হান মুজিব প্রমুখ।

এর আগে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে জুলাইয়ের সহযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীরা শিববাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শিববাড়ী মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল তেঁতুলতলা মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শিববাড়ী চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের খুলনার প্রতিনিধি মো. গালিব, আগুয়ান ৭১-এর আব্দুল্লাহ চৌধুরী, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহরম হাসান (মাহিম), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাসনিম আহম্মেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফুহাদ আলম (রনি), সিমান্ত হাসান (সুজন), খুলনা জেলা এনসিপির সদস্য এসকে তামান্না ও বীথি খাতুন প্রমুখ।

ঢাকাতে ওসমান হাদিকে গুলির প্রতিবাদে কুষ্টিয়ায় কুমারখালীতে জুলাইযোদ্ধা, ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ
ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ছাত্র-জনতা। সরকারি কলেজ মাঠ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মজমপুর ট্রাফিক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাইয়ের অন্যতম শক্তি ওসমান হাদির ওপর হামলা একটি পরিকল্পিত ঘটনা। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। মাগরিবের নামাজের পর সরকারি কলেজ জামে মসজিদে গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির সুস্থতা কামনায় মোনাজাত করা হয়।

সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুষ্টিয়ার কুমারখালী গোলচত্বর এলাকায় বিক্ষোভের আয়োজন করেন উপজেলার আহত জু্লাই যোদ্ধারা। উপজেলা আহত জুলাই যোদ্ধা কমিটির সভাপতি আমির হামজার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন কুমারখালী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আহত জুলাই যোদ্ধা তরিকুল ইসলাম (রিপন), জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আহত জু্লাই যোদ্ধা মফিজুর রহমান (শাহিন) প্রমুখ।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মশালমিছিল বের করেন এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক হয়ে রেলগেট, পান্না চত্বর হয়ে শহরের শহীদ স্মৃতি চত্বরের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানেই এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

রাজবাড়ীতে মশাল মিছিল শেষে সমাবেশ। শহরের শহীদ স্মৃতি চত্বরের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজবাড়ী জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর মাহমুদ (সুজন), সদস্যসচিব রাসেদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক, মো. ইব্রাহিম, মো. খলিল, সাইদুর জামান (সাকিব), রাজবাড়ী জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, আব্দুল্লাহ খান পলাশ, সদর উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুস সাত্তার মীজি, সদর উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. হৃদয়, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রিপন প্রমুখ।

কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ। সন্ধ্যা সাতটায় কলেজ মোড়ের বিজয় স্তম্ভ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক মুকুল মিয়া, জাতীয় যুব শক্তির আহ্বায়ক এম রশীদ আলী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ (নাহিদ), সংগঠক আলমগীর হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের জেলা সহসভাপতি বাবুল আব্দুল্লাহ ও জাতীয় ছাত্রশক্তির জেলা আহ্বায়ক জাহিদ হাসান প্রমুখ।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বের হয়ে থানা ফটকে যায়। পরে সেখান থেকে ঘুরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলা মোড় হয়ে একাত্তর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জ নগরের চাষাঢ়ায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এনসিপির নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

এ ছাড়া বিক্ষোভ–মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নড়াইল, পটুয়াখালী, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ঢাকার দোহার, পটুয়াখালীর বাউফলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং প্রতিনিধি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী, কুমিল্লা, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরের বিরামপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ঢাকার নবাবগঞ্জ ওপটুয়াখালীর বাউফল]