ফকিরহাটে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে ইউএনওর থাপ্পড়, আজ তদন্তে আসছে জেলা প্রশাসন

বাগেরহাটের মানচিত্র

বাগেরহাটের ফকিরহাটের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করবে জেলা প্রশাসন। আজ শুক্রবার সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আরিফুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে ফকিরহাটে যাচ্ছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের গোপনীয় শাখা থেকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। চিঠিতে ফকিরহাটের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে প্রয়োজনীয় সাক্ষী বা প্রমাণাদিসহ তদন্তকাজে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুরের কিছু আগে উপজেলার কাঁঠালতলা এলাকায় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে ইউএনওর গাড়িতে ঘষা লাগার অভিযোগে মোটরসাইকেল আরোহী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেছে ওই চিত্র ধরা পড়ে।

এতে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৩২ মিনিটের দিকে মহাসড়ক ধরে ফকিরহাটের দিক দিয়ে ইউএনওর গাড়িটি ফলতিতার দিকে যাচ্ছিল। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়িটি উল্টোভাবে আবার সেখানে ফিরে আসে। মিজানুর তা দেখে তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরে ইউএনওর গাড়িটি পাশ কাটিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে গাড়ি থেকে চালক নেমে আসেন এবং তাঁদের মধ্যে কিছু কথা হয়।

একপর্যায়ে ইউএনও গাড়ির পেছন থেকে আনসারের পোশাক পরা এক ব্যক্তি মিজানুরকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তুলতে চেষ্টা করে। এ সময় গাড়িতে উঠতে না চাওয়া ওই সাবেক জনপ্রতিনিধিকে ইউএনও এসে দুটি থাপ্পড় দেন। এরপরই দরজা লাগিয়ে গাড়িটি আবারও সামনের দিকে চলে যায়।

তবে ঘটনার পর থেকে ইউএনও তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ছোট একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল বলেও দাবি তাঁর।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ‘অভিযোগ তদন্তসংক্রান্ত’ ওই চিঠিতে বলা হয়, ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন কর্তৃক উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুরের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় ঘটনাস্থল এলএসডি গোডাউন (কাঁঠালতলা) ফকিরহাট বিশ্বরোড–সংলগ্ন স্থানের সামনে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের শুনানি গ্রহণ করা হবে। একই দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অফিসে বেলা ১১টায় ইউএনও মো. মনোয়ারের শুনানি গ্রহণ করা হবে। এ জন্য ধার্য সময়ে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য–প্রমাণসহ তদন্তকাজে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
জানা গেছে, ওই ঘটনায় জেলা প্রশসনের নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে এ বিষয়ে কারও সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক জনপ্রতিনিধি মিজানুরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ওই ইউএনওর শাস্তি দাবি করেছেন অনেকেই। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

মিজানুর উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকা মিজানুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিজানুরের একটি ছবি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন লিখেছেন, ‘...তার নাম “মিজান”। আমাদের ভাই, আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ফকিরহাটে দলের ত্যাগী নির্যাতিত এক নেতা, যার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী ও বরাবর নির্যাতিত হয়েও দলের পক্ষে লড়াই করেছে।...এই আওয়ামী সরকারের সরকারি কর্মচারী ইউএনও সরকারের দেওয়া গাড়িতে ঘষা লাগায় মিজানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।’ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনাকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘যথাযথ বিচার না হলে অবশ্যই বিক্ষুব্ধ জনগণ ব্যবস্থা নেবে।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধর করা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তিনি কোনো অবস্থায় তাঁর আচারণবিধি লঙ্ঘন করতে পারেন না। এর প্রশাসনিক বিচারও দাবি করেন তিনি।