‘আমাগো অ্যাহন একটাই চাওয়া, হেইডা হইলো উঁচু কইরা বাঁধ দেওন লাগবে’

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। আমাগো ঘরবাড়ির ক্ষতি হইছে। পুকুরের মাছ ভাইস্যা গ্যাছে। গাছপালা নষ্ট হইছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে আইছি। তিনি আমাগো জন্য কী কয়, হেইডা হোনতে আইছি।’ কথাগুলো বলছিলেন ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মো. নুর উদ্দিন হাওলাদার। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাগরপারের ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ারচর গ্রামে তাঁর বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন শুনে কলাপাড়া পৌর শহরে এসেছেন তিনি। তাঁর মতো উপকূলীয় এলাকার লাখো বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে ও তাঁর কথা শুনতে সেখানে এসেছেন।

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে এবং ত্রাণ বিতরণ করতে আজ বৃহস্পতিবার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী। কলাপাড়া পৌর শহরে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণের পর এলাকাবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।

নুর উদ্দিন হাওলাদার আরও বলেন, তাঁর নিজের গ্রাম কাউয়ারচর রিমালের তাণ্ডবে পুরোপুরি তলিয়ে গিয়েছিল। এতে প্রায় দুই হাজার বাসিন্দার জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৫০টি পুকুর ও ১০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। হাঁস, মুরগি, ছাগলসহ গৃহপালিত মরেছে অনেক। গ্রামটির বেশির ভাগ বাসিন্দা পেশায় জেলে। বাড়তি আয়ের জন্য মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকেই। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে থমকে গেছে তাঁদের জীবন।

আমাগো আসলে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) কাছে চাওয়ার কিছু নাই। এই উপকূলে বছর বছর যেভাবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করতেছে, উচ্চ জোয়ার যেভাবে হইতেছে, এইতে আমাগো অ্যাহন একটাই চাওয়া, হেইডা হইলো উঁচু কইরা বাঁধ দেওন লাগবে। আর প্রচুর পরিমাণে তালগাছ, খেজুরগাছসহ যেসব গাছ শক্তভাবে মাটি আঁকড়াইয়া রাহে, হেইসব গাছ লাগাইতে হইবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হেই কথাডা আমরা কইতে আইছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন

সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ মাঠে নুর উদ্দিনের সঙ্গে এসেছেন কাউয়ারচর গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, শেরেবাংলা নৌঘাঁটিসহ বহু উন্নয়নকাজ করছেন জানিয়ে আফজাল বলেন, ‘আমাগো আসলে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) কাছে চাওয়ার কিছু নাই। এই উপকূলে বছর বছর যেভাবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করতেছে, উচ্চ জোয়ার যেভাবে হইতেছে, এইতে আমাগো অ্যাহন একটাই চাওয়া, হেইডা হইলো উঁচু কইরা বাঁধ দেওন লাগবে। আর প্রচুর পরিমাণে তালগাছ, খেজুরগাছসহ যেসব গাছ শক্তভাবে মাটি আঁকড়াইয়া রাহে, হেইসব গাছ লাগাইতে হইবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হেই কথাডা আমরা কইতে আইছি।’

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড়দুর্গত পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় এসে পৌঁছান আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে। তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি কলাপাড়া পৌর শহরের খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে। সেখান থেকে তিনি বেলা পৌনে একটার দিকে ওই কলেজ মাঠে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে উপস্থিত হন। সেখানে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়ায় আসেন ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর।
কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৭৫ হাজার ১৩০ বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৪০টি বাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৬২০টি বাড়ি। মৃত্যু হয়েছে একজনের।

আরও পড়ুন