বিশেষ খাবার স্থগিতের খবরে হলগেটে ‘ছাত্রলীগের তালা’

স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের গেটে তালা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুর ২টায়
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবার স্থগিত করার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলগেট এক ঘণ্টা তালাবদ্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

শনিবার বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে হল প্রাধ্যক্ষ উপস্থিত হলে বেলা তিনটার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হলের একাধিক সূত্র জানায়, আজ বেলা দুইটার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স মাহমুদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হলগেটে তালা দেন। পরে বেলা তিনটার দিকে হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন প্রাধ্যক্ষ। এ সময় তাঁরা হলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।

আলোচনায় সাহ্‌রির খাবারের তালিকায় ভাত, মুরগি/মাছ ভুনা/ডিম, মুগ ডাল, সবজি/ভর্তা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এসব খাবারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা।

হলগেটে তালা দেওয়া ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী। সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো আন্দোলনে ছাত্রলীগ সব সময় পাশে ছিল। এর ধারাবাহিকতায় আজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’

হলগেটে তালা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হলগেটে এসে দেখি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ থেকে প্রতিবছর আমাদের খাবার দেওয়া হয়। এবার সেটা দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছিল। ফলে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি যৌক্তিক আন্দোলন। তাই তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি।’

আন্দোলনকারীদের অন্য দাবিগুলো হলো—ডাইনিং ও ক্যানটিনের খাবারের মান বাড়ানো, হলে ইফতারের ব্যবস্থা করা, ওয়াইফাই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা, মশা নিধনে ব্যবস্থা নেওয়া, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত ছাত্রদের সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষের অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণ বর্ণনা, রিডিং রুমের পরিসর বাড়ানো, জিমনেসিয়াম চালু করা, গোসলখানায় ঝুড়ির ব্যবস্থা করা, টয়লেটে বদনার ব্যবস্থা করা, গেমস রুম ও বিতর্ক পাঠশালা অন্যত্র স্থানান্তর করা, প্রতিটি তলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা এবং নিয়মিত পানির ট্যাংক পরিষ্কার করা।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলন হলে সেখানে ওই হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তালা দেওয়া হতো বলে দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, ২৬ মার্চের খাবারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলগেটে তালা মেরেছে। ছাত্রলীগের কর্মীরা সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলন করেছে।’

হলগেটে তালা দেওয়ার সময় কথা হয় সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী শাহীন আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যে খাবার দেওয়া হতো, এবার সেটা রমজানের কারণে দেওয়া হবে না বলে হল প্রাধ্যক্ষ জানিয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলে হল প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না জানানোয় আমরা হলগেটে তালা দিয়েছি।’

সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাধ্যক্ষ পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাধীনতা দিবসের খাবার রমজান মাসের কারণে পরে দেওয়া হবে। এর প্রতিবাদে হলগেটে তালা দিয়ে আন্দোলন হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই মাসের মধ্যে খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া তাঁদের অন্য দাবিগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে।