পারিবারিক কলহের জেরে ঢাকার দোহারে ছুরিকাঘাতে স্বামী-স্ত্রী নিহতের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টায়ও থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ দিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই পরিবারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। নিহত নারীর বাবার বাড়ির লোকজনের দাবি, জয়গণকে (৪৩) হত্যার পর একই ছুরি দিয়ে আত্মহত্যা করেন আইয়ুব আলী (৫২)। তবে আইয়ুবের স্বজনদের দাবি, মাকে হত্যার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সৎ বাবাকে ছুরিকাঘাত করেন সাগর হোসেন (২৩)।
গতকাল উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানায়, আইয়ুব একই ইউনিয়নের হাজারবিঘা গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। জয়গন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। জয়গনেরও আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে সাগরের জন্ম হয়। আইয়ুবের প্রথম স্ত্রীর সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুতুবপুর গ্রামে জয়গনের বাবা মান্নান বেপারীর বাড়িতে গিয়ে নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। টিনশেড ঘরের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন মান্নান।
জয়গনের বোন রোমা আক্তার বলেন, কয়েক দিন আগে কুতুবপুরে নিজের ঘরটি বিক্রি করে প্রথম স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কাছে চলে যান আইয়ুব। তবে মাঝেমধে৵ কুতুবপুরেও আসতেন। জয়গনের সঙ্গে প্রায়ই তাঁর টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে ঝগড়া হতো। গতকাল সকালে বাড়িতে এসে জয়গনকে খুঁজতে থাকেন আইয়ুব। এ সময় জয়গন বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে শাক তুলছিলেন। আইয়ুব সেখানে গিয়ে জয়গনকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। একপর্যায়ে নিজের হাতে থাকা ছুরি দিয়ে জয়গনের পিঠে ও পেটে আঘাত করতে থাকেন। পরে জয়গনের চিৎকারে সেখানে লোকজন ছুটে যান। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। একই স্থানে আইয়ুবকেও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। পরে তাঁকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। জয়গনকে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অন্যদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আইয়ুবকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পথে বেলা দুইটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
জয়গনের ছোট ভাই মো. রিপনের দাবি, জয়গনকে হত্যা করে সেই ছুরি দিয়েই আইয়ুব আত্মহত্যা করেছেন। তবে আইয়ুবের ছোট ভাই আশরাফ আলী অভিযোগ করেন, আইয়ুবকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে জয়গনের ছেলে সাগর ও বোনজামাই রাকিবসহ কয়েকজন। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি চান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাগর হোসেন বলেন, গতকালের ওই ঘটনার সময় তিনি অন্যত্র রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত ছিল। মায়ের আহত হওয়ার খবর শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। আইয়ুবকে তিনি ছুরিকাঘাত করেননি। তবে এ ঘটনায় রাকিব হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাঁর স্ত্রী রোমা আক্তার বলেন, ঘটনার সময় রাকিব বাড়িতে ছিলেন না।
দোহার থানা-পুলিশ জানায়, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় আইয়ুবের গলায় রক্তাক্ত জখম ও নাভির চারদিকে প্রায় ৮–১০টি ছুরিকাঘাতের ক্ষত পাওয়া যায়।
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, সাগর হোসেনকে জিজ্ঞাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুটি লাশেরই সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।