পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত আক্কাসের লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা, পতাকা বৈঠক
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত আক্কাস আলীর (৩৫) লাশ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গোলাগুলির ঘটনার প্রতিবাদ ও লাশ ফেরত পেতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই হাট ইউনিয়নের ইসলামপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আক্কাস আলী। গতকাল বুধবার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
বুধবার সকালে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে ওই যুবকের মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিএসএফ। নিহত আক্কাস আলী তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই হাট ইউনিয়নের ধামনাগছ এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে।
আজ সকালে নিহত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িজুড়ে স্বজনদের ভিড়। ঘরের ভেতর বিছানায় বসে কাঁদছেন আক্কাসের স্ত্রী ফরিদা আক্তার (৩২)। লোকজনের বসার জন্য উঠানে রাখা হয়েছে ভাড়া করে আনা কয়েকটি চেয়ার। স্বজনদের কেউ কেউ লাশ ফেরত আনতে পরিবারের সদস্যদের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ লাশ দাফনের প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশ কাটছেন।
স্বজনদের একজনকে কাফনের কাপড় আনতে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুস সামাদ। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘মোর মুখের সামনোত মোর বাপটার কাফনের কাপড় আনিলেন। ওর আদরের ছুয়া (ছেলেমেয়ে) দুইডার কী হবে? লাশটা কতখুনে (কতক্ষণে) আসিবে বাপু? মুই খালি একবার ছুয়াডার মুখখান দেখিম।’
ঘটনার প্রতিবাদ ও লাশ ফেরত পেতে আজ বেলা দেড়টার দিকে তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক (সিও) পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল যুবায়েদ হাসান ও ভারতীয় ১৭৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট এস এস শিরোহী নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি লাশ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানায় বিএসএফ।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল যুবায়েদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর গতকাল বিজিবি-বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠকে বিএসএফ নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছিল। আজ দুপুরে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং লাশ ফেরত চাওয়া হয়েছে। বিএসএফ জানিয়েছে, লাশ হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে আছে। হাসপাতালের কার্যক্রম ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ ফেরত দেবে। পূজার ছুটির কারণে চিকিৎসক পাওয়া নিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জ আছে বলে জানিয়েছে বিএসএফ। তবে দ্রুত লাশ ফেরত আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে বিজিবি।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে আক্কাস আলীসহ কয়েকজন ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য কাঁটাতারের বেড়া কাটছিলেন। তখন বিএসএফের ফরিকগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করলে আক্কাস ঘটনাস্থলে নিহত হন বলে জানা যায়। আক্কাসের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে এসে স্বজনদের খবর দিলে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বিজিবিকে জানায়। তবে পতাকা বৈঠকে বিজিবিকে বিএসএফ জানায়, চোরাকারবারিদের একটি দল কাঁটাতারের বেড়া কাটার সময় বিএসএফ এগিয়ে গেলে চোরাকারবারিরা তাদের ওপর হামলা করে। আত্মরক্ষায় তারা গুলি চালালে একজন মারা যায়। পরে লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত আক্কাস চোরাকারবারিদের সঙ্গে ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। বাবার এক বিঘা ভিটেবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জমি জমা নেই। ওই ভিটাতেই মা-বাবাসহ তিন ভাই বসবাস করেন।
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। কিন্তু তিনি ভারতে যেতেন না। অন্য লোকজন গরু নিয়ে আসতেন। ওই দিন তিনি কেন গিয়েছিলেন, বলতে পারছেন না। মঙ্গলবার এশার নামাজের আগে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। লোকজনের কাছে শুনেছেন, গুলিতে তিনি মারা গেছেন। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি এখন কোথায় যাবেন। তিনি স্বামীর লাশ ফেরত পাওয়ার আকুতি জানান।