প্রাথমিকের শিক্ষকদের আন্দোলন: রাজশাহীতে কোথাও চলছে পাঠদান, কোথাও কর্মবিরতি

রাজশাহী নগরের বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। আজ মঙ্গলবারছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা গেল, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে। শিক্ষকেরা নিয়মিতভাবে ক্লাস নিচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। বিদ্যালয়ের ১৪০ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই উপস্থিত ছিল।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা জেসমিন জানান, বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কর্মবিরতিতে নেই। তাই পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে শিক্ষকেরা অফিসকক্ষে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হচ্ছিল না। তাদের একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ লিখছে, কেউ গল্প করছে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে শ্রেণিকক্ষে উঁকি দিচ্ছেন।

সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা মে মাসের শুরু থেকে কর্মসূচি পালন করছি। প্রথমে এক ঘণ্টা, পরে দুই ঘণ্টা, এরপর অর্ধদিবস। এখন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে আছি। চাচ্ছি ১১তম গ্রেড। সরকার দিতে চায় ১২তম গ্রেড। ১১তম গ্রেডে একটি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে চায়, যেটা আমরা চাই না।’ তাঁর অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।

তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে। আজ মঙ্গলবার
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামিলা তারিন বলেন, শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী এলেও পাঠদান হচ্ছে না। রাজশাহীর গ্রামীণ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণী মিনজি জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন।

সহকারী শিক্ষকদের দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও কর্মসূচি চলছে। তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ হিসেবে ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ। ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন। শতভাগ পদোন্নতির ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা।

এর আগে ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপর গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।

এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, সব বিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। কী রকম প্রভাব পড়েছে, তা জানার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।