নামাজ শেষে স্বামী বাড়ি ফিরে দেখেন স্ত্রী নিখোঁজ, পরে লাশ পাওয়া গেল সেপটিক ট্যাংকে

পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময় স্থানীয় লোকজন ভিড় করেন। সোমবার সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ধনুসাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান স্বামী। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে স্বামী দেখেন তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ। একপর্যায়ে ঘরের পেছনে নলকূপের পাশে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। আজ সোমবার সকালে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীর নাম শাহিদা বেগম। তিনি ওই গ্রামের মাওলানা আবদুল মমিনের স্ত্রী। মমিন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। পুলিশ বলছে, ওই নারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা লাশ গুম করতে চেয়েছিল।

নিহত শাহিদার ছেলে পল্লিচিকিৎসক মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা পুরোনো বাড়িতে থাকি। নতুন বাড়িতে শুধু আমার মা–বাবা থাকেন। কী কারণে কে বা কারা আমার মাকে হত্যা করেছে, তা আমি জানি না।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো আজও ফজরের নামাজের সময় আবদুল মমিন তাঁর স্ত্রীকে নামাজ পড়তে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে তিনি বাসায় ফিরে স্ত্রীকে না পেয়ে চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে ঘরের পেছনে নলকূপের পাশে ওই নারীর জুতা ও কাপড় পড়ে থাকতে দেখেন আবদুল মমিন ও প্রতিবেশীরা। এরপর সেখান থেকে সেপটিক ট্যাংকের দিকে টানাহেঁচড়ার চিহ্ন দেখতে পান তাঁরা। সামনে গিয়ে দেখেন, সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা লাগানো। ঘর থেকে শাবল এনে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে দেখেন, মাথা নিচু অবস্থায় শাহিদা বেগমের লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নিহত শাহিদার স্বামী আবদুল মমিন বলেন, ‘আমি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করি। এই ঘরে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকতাম। প্রতিদিনের মতো আজ ভোরে ইমামতি করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। মসজিদে নামাজ শেষ করে সকাল সাতটার দিকে বাড়িতে এসে আমার স্ত্রীর খোঁজ করি। একপর্যায়ে ঘরের পাশের টিউবওয়েলের কাছে তাঁর পায়ের জুতা ও পরনের কাপড় দেখি। টানাহেঁচড়ার দাগ দেখে শাবল এনে সেপটিক ট্যাংকের স্লাব খুলে দেখি, আমার স্ত্রীর মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। আমার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

শাহিদার জামাতা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমার শ্বশুরের পরিবারের সঙ্গে তাঁর স্বজনদের জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিস হয়েছে। আমার শ্বশুরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তারা। আমরা পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই।’