জাতীয় নির্বাচনের বিভক্তির রেশ যাচ্ছে না টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগে

মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি বেড়ে যায়। ‘নৌকা লীগ’ ও ‘ঈগল লীগে’ ভাগ হয়ে পড়েছে।

টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ গত মঙ্গলবার পৃথকভাবে শান্তি সমাবেশ করে। দলীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা অংশ নেনছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ‘নৌকা লীগ’ ও ‘ঈগল লীগে’ ভাগ হয়ে পড়েছে।

নির্বাচনের পর টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা একদিকে এবং মনোনয়ন না পেয়ে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সমর্থকেরা আরেক দিকে। গত মঙ্গলবার এই দুই পক্ষ পৃথক পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশ করেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগ গত মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। ওই সমাবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করা আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আসেন। তখন নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন। তাঁরা তাঁদের অনুসারীদের নিয়ে শহরে শান্তি মিছিল করেন। পরে নৌকার সমর্থকেরা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সমাবেশ করেন। এই সমাবেশে খন্দকার আশরাফুজ্জামান, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুন অর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক খোরশেদ আলম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ, সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া, জেলা যুবলীগের সভাপতি মাসুদ পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিমা বাসেত প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এদিকে শহীদ মিনারে সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক শরীফ হাজারী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র সিরাজুল হক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক মাতিনুজ্জামান খান, জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক ইলিয়াস হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ ব্যাপারে শাহজাহান আনসারী বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়েছে। আমরা জেনেছি, শান্তি সমাবেশ হবে, তাই মিছিল নিয়ে সেখানে গিয়েছি। এটা আমাদের তো কোনো অপরাধ নয়।’

এম এ রৌফ বলেন, কিছুদিন আগেই যাঁরা দলের সঙ্গে বেইমানি করে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন, তাঁদের দলের সমাবেশে যোগদান করাটা নৌকা মার্কার অনুসারীরা সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই সেখান থেকে চলে গিয়ে পৃথকভাবে শান্তি সমাবেশ করেছেন।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছানোয়ার হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মামুন অর রশিদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ছানোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ঈগল প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।