৪৭ জাতের আমে রঙিন পরিত্যক্ত ইটভাটা

চাঁদপুরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় অর্ধশতাধিক জাতের ফলের একটি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় অর্ধশতাধিক জাতের ফলের একটি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো নামের এ প্রকল্প নতুন করে আলোচনায় এসেছে ৪৭ জাতের আম চাষ করে। এত জাতের রঙিন আমে বর্ণিল হয়ে উঠেছে পরিত্যক্ত ইটভাটাটি।

প্রায় ৬৩ বছরের পারিবারিক ইটভাটা বন্ধ করে হেলাল উদ্দিন গড়ে তোলেন বিদেশি ফলের বাগান। তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে এমন সব বিদেশি ফলের চাষ করা হচ্ছে, যা এই দেশে অপ্রচলিত ও উচ্চ মূল্যের। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় হওয়া এসব ফলের জাত বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়। সব ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায় না। যেসব জাতের ফল এই দেশের আবহাওয়ায় সফল ফলন হয়, সে সব জাত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।

এই উদ্যোগের বয়স মাত্র আড়াই বছর। উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিনের দাবি, বিশ্বসেরা ২০টি আমের জাতের মধ্যে ১৭টিই ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রোতে আছে। অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, কেইট, কিট, পালমার (ফ্লোরিডা), বেইলি মার্বেল, ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, হেডেন, আলফানসো, নামডকমাই সিমওয়াং, মায়া, টমি অ্যাটকিনস, আতাউলফ, কারাবাউ, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি, রেড আইভরি, থ্রি টেস্ট, আরটুইটু, কেনসিংটন প্রাইড ও মহাচানক। এই আমবাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছেন।

নানা রঙের আম
ছবি: প্রথম আলো

এখানকার ব্যবস্থাপক আবদুর রশিদ বলেন, বাগানটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শীতকালেও আম পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এসব আম পাকতে শুরু করবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক দর্শনার্থী বাগান থেকে গাছপাকা আম সংগ্রহ করছেন। দাম একটু বেশি হলেও বিদেশি জাতের নতুন আমের স্বাদ নেওয়ার জন্য আম কিনছেন। এসব আম প্রতি কেজি জাতভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে লাল, গোলাপি, খয়েরি ও হলুদ ড্রাগন ফল। এগুলোর কেজি ৫০০ টাকা।

এখানকার নার্সারিতে ৫০০ টাকার নিচে কোনো ফলের চারা বিক্রি হয় না বলে জানালেন কর্মচারী বাপ্পি সরকার।

বাগানে বেড়াতে আসা ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে পরিত্যক্ত ইটভাটায় এ রকম একটি আমবাগান হবে, আমার কল্পনায় ছিল না। আমি খবর পেয়ে এটি দেখতে চলে এসেছি। কিছু আমও নিয়েছি। ভাবছি আমার গ্রামের বাড়ির জন্য কিছু নতুন জাতের আমের চারা নেব।’

বিশ্বসেরা ২০টি আমের জাতের মধ্যে ১৭টিই ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রোতে আছে। এই আমবাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছেন।
হেলাল উদ্দিন, উদ্যোক্তা

পরিবার-পরিজন নিয়ে আমবাগান দেখতে আসা চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘আমবাগানের কথা শুনে এসে দেখি এখানে বিদেশি নানা ধরনের ফলের সমারোহ। এই ফলবাগান সত্যি দেখার মতো।’

চাঁদপুর স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, ‘নতুন নতুন জাতের আম দেখে খুব ভালো লাগল। চিন্তা করছি, আমার ছাদবাগানে এমন কিছু আমের চারা রোপণ করব।’

ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো প্রকল্পের উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন বাগানের পাশাপাশি ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক তৈরির কারখানা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি সাংবাদিকতা করতেন। দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন। সেসব দেশে নানা ধরনের ফল চাষ দেখে আগ্রহী হয়েছেন। পরে পৈতৃকভাবে পাওয়া ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ফলের বাগান করার কাজ শুরু করেন। এখন তাঁর বাগানে আমের পাশাপাশি ৪ জাতের অ্যাভোকাডো, ৬ জাতের লাল ও হলুদ ড্রাগন, ৩ জাতের কমলা, ৯ জাতের মাল্টা, ১১ জাতের আঙুর, আপেল, পেয়ারাসহ নানা ফল আছে। কোনো ধরনের কীটনাশক ছাড়াই ফলের আবাদ করা হয় এই বাগানে। বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছের যত্নের জন্য আছেন ১৪ জন শ্রমিক।

আমবাগানের কথা শুনে এসে দেখি এখানে বিদেশি নানা ধরনের ফলের সমারোহ। এই ফলবাগান সত্যি দেখার মতো।
নাহিদ সুলতানা, দর্শনার্থী

আম সংগ্রহের গল্প শোনালেন হেলাল উদ্দিন। বলেন, স্পেনের প্রধান বাণিজ্যিক আম অস্টিন। এরই আরেকটি জাত অস্টিন গোল্ড। ইতালি থেকে অস্টিন গোল্ডের চারা সংগ্রহ করেছেন। রোপণের আড়াই বছরের মাথায় ছোট্ট এই গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে। ডিম্বাকৃতির মাঝারি আমের ওজন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। নজরকাড়া গাঢ় বেগুনি রঙের আমটি খেতে সুস্বাদু, ঘ্রাণ ভালো ও রসাল।