বেলকুচিতে বিস্ফোরণে ‘বোমার কারিগর’ নিহত, শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

মোতালেব হোসেনের বাড়ির পেছনে এই খালের পানি থেকে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত টাইলসের কিছু টুকরা সংগ্রহ করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় শ্রমিক লীগ নেতার বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে কারিগর নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে নিহত ‘বোমা কারিগর’ ফজলু শেখের (৪৫) ভাই বিপুল রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। মামলায় শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব হোসেন সরকারকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

মোতালেব হোসেন সরকার বেলকুচি থানা শ্রমিক লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক। তিনি সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মামলা দিতে নিহতের ভাই, ছেলে, মেয়ের জামাই থানায় এসেছিলেন।

আরও পড়ুন

১৯ ডিসেম্বর বেলকুচি পৌর শহরের সুবর্ণসারা গ্রামের মোতালেব হোসেন সরকারের বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝিলপাড়া গ্রামের ফজলু শেখ (৪৫)। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

রাজধানীর শাহবাগ থানা-পুলিশের করা লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ফজলু শেখ বোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে তাঁর মৃত্যুসনদে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। ঘটনার দিন নিহতের অবস্থান বেলকুচিতেই ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

মোতালেব হোসেন সরকার
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুবর্ণসারা গ্রামের সরকার বাড়িতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পর আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলেও কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পর একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে আবার চলে যায়। সে সময় মোতালেবকেও দেখা গিয়েছিল। তবে মাইক্রোবাসে কী বা কাকে নেওয়া হয়েছে, তা এলাকাবাসী বুঝতে পারেননি। ওই দিন সাংবাদিক ও পুলিশকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে মোতালেব ও তাঁর স্বজনেরা জানিয়েছিলেন।

শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেলকুচির স্থানীয় সূত্রে বোমা বিস্ফোরণের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেখান থেকে দগ্ধ ব্যক্তিকে যে মাইক্রোবাসে করে আনা হয়, ঢাকা মেডিকেলেও একই মাইক্রোবাস এসেছে। অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে মোতালেবের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে ফজলুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক।

২৪ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থল মোতালেব সরকারের বাড়ি পরিদর্শন করে।

সিআইডির পরিদর্শক মহাইমিনুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে সেখানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। তবে ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করা হয়। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত টাইলস বাড়ির পাশের খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মেঝেতে নতুন টাইলস বসানো হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে খালের পানি থেকে বিস্ফোরণের কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ দুপুরে সেই আলামত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলকুচি থানার পরিদর্শক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, মামলার পর এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলছে।