জামাই-শ্বশুরের কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ, স্বজনেরা বিপাকে

শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিক মণ্ডল (বাঁয়ে) ও জামাতা সুমন চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় ধাপে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক মণ্ডল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সম্পর্কে তাঁরা আপন শ্বশুর-জামাতা।

নির্বাচনের মাঠে শ্বশুর-জামাতার কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। শ্বশুর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে লিফলেট বানিয়ে প্রচার করছেন। বিপরীতে শ্বশুরের এমন লিফলেট প্রচারণাকে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলছেন জামাই।

পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ের জামাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী। সুমন শিক্ষকতার পাশাপাশি কালের কণ্ঠ পত্রিকার পাঁচবিবি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। জামাই-শ্বশুরের দুজনই প্রার্থিতা নিয়ে অনড়। তাঁদের নির্বাচন করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন স্বজনেরা।

জামাই-শ্বশুর ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে আরও চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মুনিরুল শহিদ মণ্ডল (মুন্না), জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জাহিদুল আলম, কুসুম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন মণ্ডল ও সাবেকুন নাহার শিখা। আগামী ২১ মে পাঁচবিবিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আবু বকর সিদ্দিক। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি দিয়ে একটি লিফলেট বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন বলে প্রচার করছেন।

আবু বকর সিদ্দিকের প্রচার করা লিফলেট প্রথম আলোর প্রতিনিধির হাতে এসেছে। লিফলেটের এক কোণে বঙ্গবন্ধুর ছোট একটি ছবি দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবির নিচে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবু বকরের বড় একটি ছবি। ছবির নিচে ছোট করে লেখা, ‘২৩ জানুয়ারি ২০২৪ গণভবনে স্মার্ট পাঁচবিবি উপজেলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার সাথে পরার্মশের পর একই ফ্রেমে।’

লিফলেটে লেখা, ‘প্রিয় পাঁচবিবিবাসী...প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপার দোয়া ও আশীর্বাদ নিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আমি প্রত্যয় ব্যক্ত করছি যে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ও ভোটদানের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পাঁচবিবিবাসীর পক্ষে সম্পৃক্ত হতে চাই।’ লিফলেটের শেষে আবু বকরের নাম ও দলীয় পদবি লেখা আছে।

শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিকের প্রচার করা লিফলেট
ছবি: সংগৃহীত

শ্বশুরের এমন লিফলেট প্রচার দলীয় সিদ্ধান্তের সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন জামাতা সুমন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিকের বয়স ৭৫ বছরের ওপরে। উপজেলা নির্বাচনে আমার শ্বশুর চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি নির্বাচনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। আমার শ্বশুর প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়স্বজন কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না বলে দলের কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ আমার শ্বশুর প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন বলে লিফলেট বিতরণ করছেন। এটি দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

তবে আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি সেভাবে দেখছেন না। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থিতা উন্মুক্ত করা হয়েছে। সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আমি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। আমার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন আছে। আমি নির্বাচন করব। আমি নির্বাচিতও হব।’ তিনি বলেন, ‘আমার জামাই প্রার্থী হয়েছে। সে নির্বাচন করবে করুক। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি নির্বাচনের মাঠ কাউকে ছেড়ে দেব না।’

স্বজনেরা চেষ্টা করেও জামাই-শ্বশুরের কাউকেই প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেননি। একই পদে দুজন প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন স্বজনেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবু বকর সিদ্দিকের এক স্বজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপন জামাই-শ্বশুর চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এতে আমরা আত্মীয়-স্বজনেরা কিছুটা বেকায়দায় আছি।’

আজ মঙ্গলবার যাচাই-বাছাই শেষে জামাই-শ্বশুরসহ ছয়জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমার। জানতে চাইলে বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রার্থী মুনিরুল শহিদ মণ্ডল বলেন, ‘আমিসহ মোট ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। এর মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক ও সুমন সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই। আবু বকর আমার মায়ের চাচাতো ভাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। নির্বাচনের মাঠে অনেক প্রার্থীই অনেক কথা বলছেন। এসব কথার কথা।’