লুট করা অস্ত্র ফেরত দিয়ে কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে লুট করা ১৪টি অস্ত্র ফেরত দিয়ে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বম জাতিগোষ্ঠীর নেতারা। অন্যথায় বম জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠন কেএনএফের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বান্দরবান জেলা শহরের নিউগুলসান এলাকার একটি চার্চ কার্যালয়ে ভিডিও চিত্র ধারণের পর কেএনএফ নেতাদের উদ্দেশে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়।

ভিডিও বার্তাটিতে বক্তব্য দেন বম জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বম সোশ্যাল কাউন্সিল অব বাংলাদেশের (বিএসসিবি) সভাপতি লালজার লম বম। তাঁর সঙ্গে জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম এবং ইয়ং বম অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইবিএ), বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) ও নারীদের সংগঠন বম নুনাও ম্রুই (বিএনএম)-এর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

বিএসসিবির সভাপতি লালজার লম বম কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদ গঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্বেও রয়েছেন। প্রায় ২২ মিনিটের বক্তব্যে তিনি বলেন, কেএনএফের সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) আত্মপ্রকাশের পর ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান শুরু করে। তখন থেকে বম জনগোষ্ঠী মারাত্মক সংকটে রয়েছে। সংকট কাটাতে কেএনএফ ও কেএনএ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ২০২৩ সালের মে মাসে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সঙ্গে গত বছরের ৫ নভেম্বর এবং এ বছরের ৫ মার্চ দুই দফা কেএনএফ নেতাদের সরাসরি বৈঠক হয়েছে। এরপর ২২ এপ্রিল বৈঠকের সময় নির্ধারণ থাকা সত্ত্বেও কেএনএফ-কেএনএ ২ এপ্রিল রুমায়, ৩ এপ্রিল থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি করেছে। ব্যাংক ডাকাতির সময় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা মোটেও কাম্য নয়।

লালজার লম বম বলেন, এই ঘটনার পর থেকে বম জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যার মুখে পড়েছে। বম পাড়ার মানুষ জীবিকা নির্বাহের বাগান এবং জুমচাষের কাজে যেতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।

ভিডিও বার্তায় কেএনএফের প্রধান নাথান বমসহ নেতাদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আপনারা যে আদর্শ ও দাবিদাওয়ার কথা বলছেন, সেটি সঠিক এবং বাস্তবসম্মত নয়। সেখান থেকে সরে এসে লুট করে নেওয়া ১৪টি অস্ত্র ফেরত দিন। তারপর আলোচনার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। ১৪টি অস্ত্র ফিরিয়ে না দিলে ও আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না এলে সংকট আরও গভীর হবে। বম জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় বিএসসিবি, ওয়াইবিএ ও বিএনএম আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। তখন নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে বম জনগোষ্ঠী আরও বেশি ধ্বংসের মুখে চলে যাবে।’

জানতে চাইলে বিএসসিবির সভাপতি লালজার লম বম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়া ভিডিও বার্তাটির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভিডিও বার্তায় বম জনগোষ্ঠীর বাস্তব অবস্থা এবং কেএনএফ-কেএনএর ব্যাপারে বমদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। কেএনএফের কাছেও এই ভিডিও বার্তা পৌঁছেছে। তবে সংগঠনটির কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।  

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ২ এপ্রিল ও থানচি উপজেলায় ৩ এপ্রিল ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, কেএনএফ সদস্যরা এই ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে এ পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে চার ‘কেএনএফ সদস্য’ নিহত নিহত হয়েছেন।