উজিরপুরে বিদ্যালয় ভবনের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় এই টিনের ঘরে পাঠদান চলছে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উত্তর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণকাজ ছয় মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই ভবন নির্মাণের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিনের ঘরে ক্লাস করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ওই কাজ আজও শেষ হয়নি। এ ঘটনায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উজিরপুর কার্যালয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে ১৯৯০ সালে ১৬১ নম্বর উত্তর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। এই বিদ্যালয়ে ৯৬ জন শিক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক আছেন। ১৯৯০ সালে নির্মিত বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ২০১৭ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ২০৬ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জহির খান ভবন নির্মাণের কাজটি পান। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তাঁকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্রের শর্তানুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে তাঁর কাজ শেষ করার কথা ছিল।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর নাথারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনটি ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হয়। গত ৫ বছরে ঠিকাদার শুধু ভবনের ভিত ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছেন। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখায় কলামের রডগুলোতে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। পাশেই প্রায় ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট প্রস্থের একচালা টিনের ঘরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। ঘরটি নিচু এলাকায় নির্মাণ করায় একটু বৃষ্টি হলেই মেঝেতে পানি জমে থাকে। এতে বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় বিশ্বাস বলে, ক্লাসের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি গড়িয়ে ক্লাসের ভেতরে আসে। চলিত বর্ষা মৌসুমে এভাবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিংকু বিশ্বাস বলে, ‘আমাদের স্কুলঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। একটু বৃষ্টি হলে মেঝেতে পানি জমে যায়। কাদা মেখে বাড়িতে যেতে হয়। বই-খাতা সবই ভিজে যায়।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুনীল বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বললে ঠিকাদার শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন ভাঙার কথা ছিল না। ঠিকাদারের অধিক লাভের জন্য পুরোনো ভবন ভেঙে মালামাল নিজে আত্মসাৎ করে অধিক লাভবান হন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিকে না তাকিয়ে ঠিকাদার একটি মরণফাঁদ তৈরি করেছেন। কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থী ভিত ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা রডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপুল চন্দ্র সমদ্দার জানান, ‘ঠিকাদার পুরোনো ভবনটি ভেঙে ফেলেছেন। পরে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা মিলে একটি একচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। সেখানে এখন পাঠদান করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয়। গত ৫ বছরে নির্মাণকাজ কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন হচ্ছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জহির খানের কাছে ফোন করলে তিনি ধরেননি। ঠিকাদারের পক্ষে কাজ তদারককারী কর্মচারী মিন্টু মজুমদার বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ওই এলাকায় নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসতে সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।