রাজশাহীতে ধানি জমিতে পুকুর খননে বাধা, এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে হত্যা
রাজশাহীর মোহনপুরে ধানি জমিতে পুকুর কাটতে বাধা দেওয়ায় এক তরুণকে এক্সকাভেটরের চাকার নিচে ফেলে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বড় পালশা গ্রামে ওই তরুণ নিহত হন।
নিহত আহমেদ জোবায়ের (২৩) উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক্সকাভেটরের চালক আবদুল হামিদকে আটক করে। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, বড় পালশা গ্রামে মাঠে সব আবাদি জমি। সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ কোনো পুকুর খনন করেননি। হঠাৎ গতকাল রাতে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে পুকুর খনন করার জন্য গোপনে এক্সকাভেটর নামানো হয়েছে। এই খবর মসজিদের মাইক থেকে মোয়াজ্জিন আবদুল মান্নান ঘোষণা করেন। তখন গ্রামের লোকজন মাঠের দিকে ছুটে যান। প্রথম দিকে জুবায়েরসহ সাত থেকে আটজন পুকুর খননের প্রতিবাদ জানান। তখন চালক আবদুল হামিদ দ্রুত এক্সকাভেটরের বাকেট (মাথা) চারপাশে ঘোরাতে থাকেন। এতে ধাক্কা লেগে জোবায়ের মাটিতে পড়ে যান। চালক আবদুল হামিদ এক্সকাভেটর নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে জোবায়ের গায়ের ওপর দিয়ে এক্সকাভেটর চালিয়ে দেন তিনি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর গ্রামের শতাধিক মানুষ মাঠে নেমে যান। তাঁরা চালক হামিদকে আটক করেন এবং এক্সকাভেটরে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিলেন পুকুর খননের উদ্যোক্তা ধুরইল ইউনিয়ন বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান (বকুল)। এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁর মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আরেক প্রান্ত থেকে একজন বলেন, ‘এটি বকুলের ফোন নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বড় পালশা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া মোটরসাইকেল পড়ে আছে। এক্সকাভেটরের নিচে আগুন জ্বলছে। অসংখ্য মানুষ সেখানে হাজির হয়েছেন।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন আজ সকালে বলেন, চালক আবদুল হামিদকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজিম উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘আনিসুজ্জামান এই পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত বলে তিনি জেনেছেন। আনিসুজ্জামান বিএনপির ইউনিয়ন কমিটিতে আছেন; কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের ভোট করেছেন। এখন আবার বিএনপির ক্ষমতা খাটিয়ে এখানে ধানি জমিতে পুকুর খননে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ঘটনা সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।’