দখল করা ভবন বরাদ্দ পেতে গণ অধিকার পরিষদের এক নেতার আবেদন, দলের পক্ষ থেকে অস্বীকার

খুলনায় পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্র ক্লাব দখলে নিয়ে টাঙানো গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয় লেখা ব্যানারটি এখনো রয়েছে। বুধবার নগরের শান্তিধাম মোড়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার নগরের শান্তিধাম মোড়ে ‘গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দখলে নেওয়া গণপূর্তের দোতলা ভবনটি বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছেন বিদার শিকদার নামের এক ব্যক্তি। তিনি গণ অধিকার পরিষদ খুলনা মহানগরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

তবে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিদার শিকদার যদি ভবন বরাদ্দ পেতে আবেদন করে থাকেন, তাহলে সেটি একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি গণ অধিকার পরিষদের নাম ভাঙিয়ে ভবন দখল করা হয়ে থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে দখলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে গণ অধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শেখ রাশেদুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু এরপরও দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাশেদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, এ–সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমার কাছে আসেনি। এ জন্য দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’ ভবনটি বরাদ্দ পেতে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিদার শিকদার ভবনটির বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি ভবনটি বরাদ্দ পেলে আমাদের সেখানে বসতে দেবেন।

রাশেদুল আরও বলেন, ‘ওই ভবনে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ হতো। স্থানীয় মানুষের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওই ক্লাবকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবার যেন কেউ তা দখলে নিতে না পারে, সে জন্য আমরা ভবনে অবস্থান করছি। এখানে কারও ভবন দখল করা হয়নি।’

বিদার শিকদারের সঙ্গে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে ওই ভবন দখলের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন গণ অধিকার পরিষদের খুলনা মহানগরের সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দখলের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরই কেন্দ্র থেকে তাঁকে (রাশেদুল) অব্যাহতি দিয়েছে। সেই চিঠি আমার কাছে আছে। কিন্তু রাশেদুল পেয়েছেন কি না তা জানি না। তবে চিঠি পেয়ে যাওয়ার কথা। যদি রাশেদুল দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন, তাহলে তা কেন্দ্রীয় কমিটি দেখবে। এ ছাড়া ওই ভবনে গণ অধিকার পরিষদের নাম ব্যবহার করার ব্যাপারটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হবে ’

শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত পুরোনো ওই ভবনটি খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২–এর আওতায়। ওই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সরকারের পক্ষে গণপূর্ত বিভাগ এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। গত ১৭ অক্টোবর বিদার শিকদার নামের এক ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ভবনটি বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছেন। কিন্তু ওই বাসা তিনি পাবেন কি না, সে–সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আবেদনটি নিষ্পত্তিযোগ্য নয়।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ২০১৪ সালে ভবনটি বিক্রির জন্য সরকার থেকে অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল। এরপর বিক্রির উদ্যোগ নিলে সেখানে বসবাসরত ব্যক্তিরা আদালতে মামলা করেন। সেই মামলা এখনো চলমান। গত ১৭ ডিসেম্বর একজন ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন পরিদর্শন করে ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ওই ভবনটি দখল হয়ে গেছে বলে তাঁরা শুনেছেন। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে বলে জানান ওই নির্বাহী প্রকৌশলী।

শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র ক্লাবটি যে ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো, সেটি মূলত গণপূর্তের একটি দ্বিতল ভবন। ভবনের দ্বিতীয়তলা বরাদ্দ নিয়ে ক্লাব কার্যক্রম পরিচালনা করছিল পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র। আর নিচতলায় রয়েছে আরও কিছু কার্যালয়। ২০১০ সালের দিকে গণপূর্ত থেকে নিজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে আসে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র। এরপর প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কর্মকর্তারা।

গত সোমবার দুপুরের দিকে ভবনের তালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। পরে পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের সাইনবোর্ড খুলে সেখানে ‘গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়’ লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেন তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ওই কার্যালয়ের সামনের অংশে দলীয় বিভিন্ন নেতা-কর্মীর ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলে কার্যালয়ে মাইক টানিয়ে ভবনের নিচে মানববন্ধন করে গণ অধিকার পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ খুলনা মহানগর শাখা।

মানববন্ধনে গণ অধিকারের অব্যাহতি পাওয়া নেতা শেখ রাশেদুলও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল, এখানে পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের অবৈধ কার্যক্রম চলত। এখানে জুয়া খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ৫ আগস্টের পর এসব অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ক্লাবটি অবৈধভাবে জায়গাটি দখল করে আছে। এরপর আমরা আমাদের প্রক্রিয়াতে তাঁদের উচ্ছেদের জন্য বারবার বলেছি। তারা সরবে না; বিধায় আমরা স্থানীয় ও আরও যেসব রাজনৈতিক দল আছে, সবাইকে বলে এটাকে উচ্ছেদ করার জন্য আজ এসেছি। এখানে যেন কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ না হয়, সে জন্য আমরা আজ থেকে এখানে পাহারায় থাকব।’