আশুগঞ্জে অটোরিকশার ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় সংঘর্ষ, আহত ৩০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় দুই পক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল মিয়ার গোষ্ঠী (জারুর গোষ্ঠী) এবং ইউপি সদস্য মিজান মিয়ার গোষ্ঠীর (বারঘরিয়া গোষ্ঠী) লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ দুর্গাপুর গ্রামের অন্তত ছয়টি স্থানে সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বল্লম ছুড়ে মারেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে বেলা একটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষের লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। স্থানীয় সর্দার-মাতবরদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদি তাঁরা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে, তাহলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বারঘরিয়া গোষ্ঠীর মুন্সিবাড়িতে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে গ্রামে চলাচলের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি রাস্তার ওপর কিছু দোকানপাটও বসে। গতকাল রাতে রাস্তায় জারুর গোষ্ঠীর মো. কুতুব মিয়ার ছেলে মো. রুহুল আমিন সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় অটোরিকশা একজনের গায়ে লেগে যায়। এ নিয়ে রুহুলের সঙ্গে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে অটোরিকশা ভাঙচুর করে রুহুলকে মারধর করেন তাঁরা। রুহুল বাড়িতে গিয়ে তাঁর গোষ্ঠীর লোকজনকে বিষয়টি জানান। পরে জারুর গোষ্ঠীর লোকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর দুটি অটোরিকশা আটক করে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
শুক্রবার রাতেই দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাসেল মিয়া বিষয়টি সমাধানে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর সদস্য ইউপি সদস্য মিজান মিয়াকে বাড়িতে ডেকে আনেন। সেখানে গেলে চেয়ারম্যানের সামনেই জারুর গোষ্ঠীর লোকজন ইউপি সদস্য মিজানকে পিটিয়ে আহত করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর লোকজন রামদা, বল্লম ও লাঠিসোঁটা নিয়ে জারুর গোষ্ঠীর লোকজনের ওপর হামলা করেন। পরে জারুর গোষ্ঠীর লোকজনও পাল্টাহামলা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগের রাতের ঘটনার জেরে আজ বেলা ১১টার দিকে উভয় গোষ্ঠীর লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুর্গাপুর গ্রামের অন্যান্য গোষ্ঠীর লোকজন উভয় গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে সংঘর্ষে জড়ান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউপি সদস্য মো. মিজান মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার রাতের ঘটনা মীমাংসা করার কথা বলে চেয়ারম্যান আমাকে তাঁর বাড়িতে ডেকে নেন। চেয়ারম্যানের সামনেই লোকজন আমাকে পিটিয়ে আহত করেছে।’
ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাসেল মিয়া বলেন, শুক্রবার রাতের ঘটনার জেরে সকালে আবার সংঘর্ষ হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। স্থানীয় সর্দার-মাতবরদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদি তাঁরা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে, তাহলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে মামলা হয়নি।