চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগ সভাপতিকে নেতা–কর্মীদের ধাওয়া, ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর এবার লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ধাওয়া দেওয়া ব্যক্তিরা শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয়ের নেতা-কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বাতিল চেয়ে নতুন কমিটির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন ওই অংশের নেতা-কর্মীরা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরেক উপপক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেস বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয়। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে ফটকের তালা খুলে দেন নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদের বুঝিয়ে হলে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন শান্ত।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কর্মীকে দিয়ে পা টেপানো, পরিকল্পিতভাবে নিজের অনুসারীকে কুপিয়ে জখমসহ বিভিন্ন ঘটনায় সমালোচনার পর ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন রেজাউল হক। তবে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর থেকে কিছু কর্মী নিয়ে আবার সংগঠিত হচ্ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে ‘বিএনপির নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে ছাত্রসমাবেশ করার ঘোষণা আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেজাউল তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। এ কথা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সিএফসি ও বিজয়ের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ধাওয়া দেন এবং ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে রেজাউল হক বলেন, বিজয় ও সিএফসি উপপক্ষের কিছু ছেলে পথভ্রষ্ট। তাঁরা জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে কর্মসূচি সহ্য করতে পারেননি। এ কারণে তাঁরা ঝামেলা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদী মিছিল করতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। জিরো পয়েন্ট ও শহীদ মিনার এলাকায় কর্মসূচি পালন করে ফেসবুক লাইভে এসে তা প্রচারও করেছেন তিনি। নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে তিনি ওই জায়গা ত্যাগ করেছেন। তাঁকে কেউ ধাওয়া দেয়নি।
রেজাউল হক আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিএফসি উপপক্ষের নেতৃত্ব দিতেন। এখন এ উপপক্ষের নেতৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। তিনি বলেন, রেজাউল হক বহিরাগত লোকদের নিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে এসেছিলেন। তাঁকে প্রতিহত করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।
এক বছর মেয়াদের কমিটি চার বছর পার করেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ গতি হারিয়ে ফেলেছে। কর্মীদের রাজনৈতিক স্পৃহা নষ্ট হচ্ছে। নতুন কমিটি না দিলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি আরও অন্ধকারের দিকে যাবে।
রেজাউল হকের বিরুদ্ধে বয়স শেষ হওয়ার পরও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকা, ছাত্রত্ব না থাকার পরও বছরের পর বছর আবাসিক হলের কক্ষ দখল করে থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ৯ জুন রেজাউল হককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিজয় উপপক্ষ। পাশাপাশি ছাত্রলীগ থেকে রেজাউলের বহিষ্কার চেয়ে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ ও বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এর আগে, একই দাবিতে গত ১৬ মে ও ২৪ মে ভার্সিটি এক্সপ্রেস ও সিক্সটি নাইন উপপক্ষও রেজাউলের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে তিনি যে কক্ষটি (৩১১ নম্বর কক্ষ) দখল করে থাকতেন, সেটিও ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।