ভাড়া ভবনে নষ্ট হচ্ছে জমির দলিল, নথিপত্র

দুটি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পরিবেশই স্যাঁতসেঁতে। অযত্ন–অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দলিলপত্র। নতুন ভবন করা হলেও তা এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে না।

গাজীপুরের মারিয়ালি এলাকার বাসিন্দা কাজী ইসমাইল হোসেন। তাঁর জমির একটি মূল দলিল হারিয়ে গেছে। দলিলটির নকল ওঠাতে সম্প্রতি তিনি গিয়েছিলেন জেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। অনেক ঘেঁটে দেখেন, বালাম বই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। পরে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন ইসমাইল। কাজী ইসমাইল হোসেনের মতো অনেকেই দলিলের নানা সমস্যা নিয়ে ওই কার্যালয়ে গিয়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন। তাঁদের অভিযোগ, অযত্ন–অবহেলায় গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে ভাড়া করা দুটি ভবনে জেলা রেজিস্ট্রার ও দুটি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। ভাড়া করা ভবনে নষ্ট হচ্ছে দলিল, বালাম ও ইনডেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। গাজীপুর জেলা শহরের পাশেই প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়। কাজ শেষ হলেও অজানা কারণে ভবনটি উদ্বোধন করা হচ্ছে না। ফলে সেখানে নথিপত্র ও কার্যালয় স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি।

জেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা রেজিস্ট্রি ও সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় ২০১৭ সালে গাজীপুরে শুরু হয় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। গত বছরের অক্টোবর মাসে এটির কাজ শেষ হয়। ভবনটি নির্মাণ করতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগ কাজটি সম্পন্ন করে জেলা রেজিস্ট্রারকে ভবনটি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেয়। জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা গত বছরের ২৬ অক্টোবর জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়ে ভবনটি বুঝে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পাঁচ মাসেও ভবনটি বুঝে নেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা রেজিস্ট্রি ও সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের জন্য নতুন ভবনটিতে স্থানান্তর এবং ভবনটি উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইজিআরের অনুমতি পেলে যেকোনো সময় নবনির্মিত ভবনে কার্যক্রম করা সম্ভব হবে।

রেকর্ড কিপার, দলিল লেখক ও নকলনবিশেরা জানান, বর্তমান অফিসটিতে রাখা রেকর্ডপত্র এবং বালাম বইয়ের পাতা একটি আরেকটির সঙ্গে লেগে যাচ্ছে। বালাম বই খুলতে গেলে পাতা ছিঁড়ে যায়। বালামের লেখা এবং ইনডেক্সের লেখা লেপ্টে গিয়ে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ নকল চাইলে তা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে সব রেকর্ড নষ্ট হয়ে যাবে।

গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার ও দুটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস শুরু থেকেই ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ওই ভবন দুটিতে প্রায় ৪০ হাজার বালাম বই, ইনডেক্সসহ নানা রেকর্ডপত্র রয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশে এগুলো সংরক্ষণ করা না হলে এই রেকর্ডগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

গাজীপুরের জনসংখ্যার আধিক্য এবং সেবার কথা বিবেচনা করে বৃহত্তর গাজীপুর সদর উপজেলায় সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের পাশাপাশি একটি যুগ্ম সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় চালু করা হয়। এর মধ্যে সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সাবেক গাজীপুর পৌরসভা, সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়ন, বাড়িয়া, পিরুজালী, ভাওয়ালগড় ও মির্জাপুর ইউনিয়নের জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। আর যুগ্ম সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে মহানগরের সাবেক বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর ইউনিয়নের জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। তবে পাশাপাশি দুটি কার্যালয়ের বর্তমানে সাবরেজিস্ট্রার একজনই। যুগ্ম সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের নিজস্ব কোনো জনবলও নেই। এতে সেবাগ্রহীতারা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। একজন সাবরেজিস্ট্রার সপ্তাহে দুই দিন ও তিন দিন করে দুই কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।