ফরিদপুরে স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় ৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৩ জনের

স্কুলছাত্রকে হত্যার মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেছবি: প্রথম আলো

ছয় বছর আগে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় আলাউদ্দিন মাতুব্বর ওরফে অন্তর (১৪) নামের এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যার মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী গ্রামের মাহাবুব আলম (৩৬), পিপরুল গ্রামের কামাল মাতুব্বর (৩২) ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের খোকন মাতুব্বর (৪৮)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন পাগলপাড়া গ্রামের আশরাফ শেখ (৩৪), তাঁর ভাই আজিজুল শেখ (৩২) এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের সুজন মাতুব্বর (৩৬)। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের সবাইকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশি পাহারায় তাঁদের জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুন রাতে তারাবিহর নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার পরে অপহরণ করা হয় নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বরকে। পরদিন আলাউদ্দিনের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। রাতেই জান্নাতি বেগমের মুঠোফোনে কল দিয়ে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে একটি সেচ মেশিনের ঘরে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রেখে অপহরণকারীদের দেওয়া হয়। ১৫ জুন আলাউদ্দিনের মা ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে নগরকান্দা থানায় অপহরণের মামলা করেন। ২৪ জুন পুলিশ মুক্তিপণ দাবি করা মুঠোফোনের মালিক মাহবুব আলম ও তাঁর ভাই জুবায়ের ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৬ জুন রাতে পুলিশ চক এলাকার খালপাড় থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের লাশ উদ্ধার করে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক নিখিল চন্দ্র অধিকারী ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত আলাউদ্দিন মাতুব্বরের মা জান্নাতি বেগম বলেন, ‘সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই, এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) স্বপন কুমার পাল বলেন, দীর্ঘ সাক্ষ্য–শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও বিমল তুলশিয়ান বলেন, রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তাঁরা।