গড়াই নদে একসঙ্গে ঝাঁপ দিল পাঁচ শিশু, ডুবে মারা গেল দুই ভাইবোন

গড়াই নদে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুতে আহাজারি করছেন স্বজনেরা। আজ দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় একসঙ্গে গোসল করতে গড়াই নদে ঝাঁপ দেয় মামাতো-ফুফাতো পাঁচ ভাইবোন। এর মধ্যে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া এক শিশুর নাম মোছা. শেফা খাতুন (১৪)। সে কুমারখালী পৌরসভার বাসিন্দা মো. শামিমের মেয়ে। শেফা কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মারা যাওয়া অপরজনের নাম মো. শাহাজাদা (১০)। সে চাপড়া ইউনিয়নের জয়নাবাদ বাসিন্দা পাড়া এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে। তারা দুজন সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেফা ঈদের পর দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে নানা বাড়ি জয়নাবাদ গ্রামে বেড়াতে এসেছিল। আজ সকাল ১০টার দিকে শেফাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য তার বাবা এসেছিলেন। কিন্তু সে বাড়ি না ফিরে দুপুরে মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন, মামি ও খালাদের সঙ্গে গড়াই নদে গোসল করতে যায়। শেফা, শাহাজাদা, আলিফ (১১), আশা (১২) ও জাকিয়া সুলতনা (১৩) নামে পাঁচ মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন নদের এক গর্তে ঝাঁপ দেয়। সবাই ভেসে উঠলেও শেফা ও শাহাজাদাকে দেখা যাচ্ছিল না। নদের পাড়ে থাকা শেফার মামী শিমু খাতুন ও স্থানীয় কয়েকজন পানি থেকে দুজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানে শেফা ও শাহাজাদাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আজ দুপুরে জয়নাবাদ গ্রামে গিয়ে স্বজন, প্রতিবেশী ও উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। আহাজারি করছিলেন স্বজনেরা। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সান্ত্বনা দেন। সেখানে আব্দুর রউফ বলেন, ‘সন্তানদের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। ছোট-বড় সবাইকে সাঁতার শেখা উচিত।’

বিলাপ করতে করতে শেফার মা খালেদা খাতুন বলেন, ‘আমার কি হলো রে! মা তুই গেলি রে। সকালে বাড়ি গেলি এমন হতো না রে। আমি এখন কীভাবে বাড়ি যাব? কাকে নিয়ে বাঁচব?’

শেফার বাবা মো. শামীম বলেন, ‘ঈদের পরদিন থেকে শেফা নানাদের বাড়ি। আজ সকালে বাড়ি নিতে এসেছিলাম। কিন্তু চেষ্টা করেও নিতে পারি নাই।’

দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আলিফ জানায়, বড় মানুষেরা একটু পেছনে ছিল। তারা পাঁচজন আগে আগে গিয়ে নদীর গর্তে ঝাঁপ দেয়।

শেফার মামী শিমু জানান, গলা সমান পানির একই গর্তে সবাই ঝাঁপ দিয়ে ডুবে গিয়েছিল। ওরা কেউ সাঁতার জানত না। তিনি দ্রুত গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, নদীতে গোসল করতে গিয়ে গর্তে পড়ে দুই শিশু মারা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, গড়াই নদে গোসল করতে গিয়ে দুই মামাতো-ফুফাতো ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দুটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।