চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাথানবাড়ি
চুরির হিড়িক, তৎপরতা নেই পুলিশের
শনিবার রাতে চুরি করতে গিয়ে একজন ধরা পড়েন। পুলিশকে জানানোর পরও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নে বাথানবাড়িতে (চাষাবাদের সরঞ্জাম ও চাষিদের থাকার ঘর) চুরির হিড়িক পড়েছে। গত তিন সপ্তাহে অন্তত সাতটি বাথানবাড়িতে চুরি হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চোর ধরতে পুলিশের তৎপরতা কম। গত শনিবার রাতে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে একজন ধরা পড়েন। পুলিশকে জানানোর পরও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পরে কৌশলে পালিয়ে গেছে চোর।
জামতাড়া এলাকার ফলচাষি মতিউর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে জামতাড়া এলাকায় তাঁর মিশ্র ফলবাগানের বাথানবাড়ির চাল থেকে টিন খুলে নিয়ে যায় চোর। গত শনিবার রাতে আবারও বেড়ার টিন খুলতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়েন আলাল নামের এক ব্যক্তি। তখন আলাল ১৭ মার্চ রাতে এই এলাকার সারওয়ার হোসেনের বাথানবাড়ি থেকে একটি স্যালো মেশিন, সোলার সিস্টেমের একটি ব্যাটারি, কয়েকটি বড় হাঁড়িপাতিল চুরি করার কথা স্বীকার করেন। সজীব নামের শিবতলা এলাকার এক ভাঙারির দোকানদারের কাছে মালামাল বিক্রির কথা জানান আলাল। সজীবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মালামাল ফেরত দিতে রাজি হন। আলালের স্ত্রীর সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। তিনিও চুরির মালপত্র ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
মতিউর রহমান আরও বলেন, পরে তাঁরা আমনূরা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তারুজ্জামানকে ঘটনা জানান। তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। তবে চোরকে হেফাজতে না নিয়েই ফিরে যান। এরপর তাঁরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেনকে জানান। তখন আটক আলালকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন ওসি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শে তাঁকে ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আলাল পালিয়ে যান।
মতিউর রহমান অভিযোগ করেন, ১৫-২০ দিনের মধ্যে ৭ জন চাষির স্যালো মেশিনসহ নানা সরঞ্জাম চুরি হয়েছে। এর আগে কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে আমনূরা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চোর হিসেবে যাঁকে ধরা হয়েছিল, আসলে তিনি চোর নন, একজন হেরোইনসেবী। তাঁকে বেদম মারধর করা হয়েছিল। অসুস্থ আসামিকে আদালত গ্রহণ করতে চান না।
ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। তিনি বলেন, বেদম মারধর করা হলে চোর পালাল কী করে? ওই এলাকায় সম্প্রতি আশঙ্কাজনকভাবে চুরি বেড়ে গেছে। একটি সংঘবদ্ধ চোরের দল চুরি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু চুরি প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা হতাশাজনক।
ঝিলিম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ অভিযোগ করেন, ‘ওই সাতজন চাষির বাইরে আরও মানুষের মালপত্র চুরি হয়েছে। আমরা ফাঁড়ির পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। চুরি কিছুতেই থামছে না।’
সারওয়ার হোসেন বলেন, ১৭ মার্চ রাতে চুরির ঘটনায় পরদিন থানায় অভিযোগ করেছিলেন। রোববার আলাল ও তাঁর সহযোগী সজীবের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
মাসখানেক আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীনের জামাতার বাথানবাড়ি থেকে তিনটি গরু চুরি হয়। রুহুল আমীন বলেন, ‘লজ্জায় চুরির বিষয়টি প্রকাশ করিনি। থানায় জিডিও করিনি। বরেন্দ্র অঞ্চলে চোরের উপদ্রব ব্যাপকহারে বেড়েছে। পরবর্তী সময়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি তুলে ধরব।’