চলতি বছর সব হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজসহ দেশের আটটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিমুলেশন ল্যাব ও ই-লাইব্রেরি উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে ছ
বি: প্রথম আলো

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা উন্নত করতে নতুন নতুন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০টি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। চলতি বছরই পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু হবে। এতে রোগ নির্ণয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হবে।

আজ শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজে সিমুলেশন ল্যাব ও ই-লাইব্রেরির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আজ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজসহ দেশের আটটি মেডিকেল কলেজে সিমুলেশন ল্যাব ও ই-লাইব্রেরি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

আজ দুপুরে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজের মিলনায়তনে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন।

উদ্বেোধীন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সিমুলেশন ল্যাব একটি অত্যাধুনিক, ডিজিটাল ও স্মার্ট পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কীভাবে কাজ করে এবং অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সেলাই—সবকিছুই দেখতে ও শিখতে পারবেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্ররা রোগীর ওপর প্রয়োগ করার আগেই সিমুলেটরের মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের স্বনামধন্য লেখকদের পাঠ্যবই, জার্নালসহ অন্যান্য রেফারেন্স বই হাতের নিমেষেই পড়তে পারবেন। এতে অনেক মূল্যবান বই ও জার্নাল ব্যবহার করে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকেরা গবেষণার কাজকে এগিয়ে নিতে পারবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ে তিনি স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য অনেক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নেরই ফসল। তিনি চেয়েছেন ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা শুরু হোক। বঙ্গবন্ধুরই চিন্তাচেতনায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিকস অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) শুরু করা হয়।

দেশের প্রতিটি খাত এগিয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ৩৭টি ই-লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন, যেখানে আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব ৫০ ভাগেরও কম। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলো আট ঘণ্টা চালু থাকে। এখন থেকে এফডব্লিউসি ২৪ ঘণ্টাই স্বাস্থ্যসেবা দেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসবের হার বেড়ে যাবে। এর মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমুত্যুর হার আরও কমে যাবে। পাশাপাশি প্রসূতির অস্ত্রোপচারও কমে যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদ্‌রোগ অনেক বেড়েছে। দেশে যত রোগী মারা যান, তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগীই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এসব রোগের চিকিৎসাব্যবস্থার বিস্তার ছিল না দেশে, এখনো বিস্তার লাভ করেনি। মেডিকেল কলেজগুলোতে কিছু কিছু চিকিৎসা হয়। এসব রোগের চিকিৎসায় আটটি বিভাগে আটটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এসব হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হবে। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার। অনেক জেলায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলাতেই মেডিকেল কলেজ হবে। প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে। ইতিমধ্যে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. টিটো মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (চিকিৎসা শিক্ষা) অতিরিক্ত সচিব আবুল বাশার জামাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর মো. মোশাররফ হোসেন, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম এবং কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আরশ্বাদ উল্লাহ প্রমুখ।