একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন বাবা–ছেলে

আবু রায়হান (বাঁয়ে) ও ইমামুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় বাবা ইমামুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে আবু রায়হান এবার একসঙ্গে এসএসসি পাস করেছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে তাঁরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

এই বাবা-ছেলের বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চকতকিনগর গ্রামে। এর আগে ২০১৭ সালে মা মলি রানি ও ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি ও ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। প্রথম আলোতে সেই খবর প্রকাশের পর আলোচনায় এসেছিলেন মা-ছেলে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের সংবর্ধনা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

সোমবার দুপুরে প্রকাশিত ফলে বাবা ইমামুল ইসলাম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৯ এবং ছেলে আবু রায়হান পেয়েছে জিপিএ ৪ দশমিক ৮২। ইমামুল ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড থেকে পরীক্ষা দেন। আর রায়হান পরীক্ষা দেয় জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেড থেকে। প্রত্যাশিত ফল করায় তাঁদের বাহবা দেন সহপাঠী ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা।

ইমামুল ইসলাম বলেন, ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংসারের অভাব-অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণি পাসের পর আমার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ২৪ বছর আগে আমি ঢাকায় যাই। সেখানে প্রায় ১৮ বছর গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করি। ২০১৬ সালে সেই কাজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরে জমানো টাকা দিয়ে আমের ব্যবসা শুরু করি। পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি ছোট মুদিদোকান দিই। লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট আমাকে পীড়া দিত। লোকলজ্জায় পড়ালেখা হয়ে উঠছিল না। নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারি, সে উদ্দেশ্যে পারিবারিক সিদ্ধান্তে ২০২০ সালে ছেলের সঙ্গে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। এবার পাস করলাম। এখন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।’

আবু রায়হান বলে, ‘বাবা পাস করায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।’

বাবা-ছেলের একসঙ্গে পাসের খবরে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোছা. সামসুন্নাহার।