সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টাসহ তিন মামলায় সাত আসামির কারাদণ্ড

আদালত
প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জে পৃথক তিনটি আলোচিত মামলার রায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন, ১ জনের ১৪ বছর, আরেকজনের ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এসব রায় ঘোষণা করেন।

মামলা তিনটি হচ্ছে দিরাই উপজেলায় চলন্ত বাসে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, বিশ্বম্ভরপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) এক নারী কর্মীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ছাতকে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর এক কলেজছাত্রী সিলেট থেকে একটি বাসে করে তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যাচ্ছিলেন। দিরাই শহরের কাছাকাছি গিয়ে বাস থেকে অন্য যাত্রীরা নেমে গেলে তিনি বাসে একা হয়ে পড়েন। এ সময় তিনিও নামতে চাইলে বাসের চালক শহীদ মিয়া তাঁকে শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। পরে বাস চলতে শুরু করলে শহীদ মিয়া তাঁর সহকারীকে চালকের আসনে বসিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন ওই ছাত্রী। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় মেয়েটির ভাই থানায় মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ শহীদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এরপর পুলিশ শহীদ মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। মামলায় আদালতে নয়জন সাক্ষী দেন। আজ মামলার রায়ে আদালত শহীদ মিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা ভুক্তভোগী ছাত্রী পাবেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার একটি গ্রামের এক কলেজছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করতেন। ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট দুপুরে ওই সংস্থার কাজে উপজেলা সদরে আসেন। কাজ শেষে ফেরার পথে আনোয়ার হোসেন ওরফে খোকন নামের এক ব্যক্তি বেড়ানোর কথা বলে তাঁকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে নিয়ে যান। পরে সেখানে আখখেতে নিয়ে ভয় দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

এ সময় ওই এলাকার ছয়ফুল্লাহ, সাইদুর রহমান ও শফিকুল নামের আরও তিন যুবক এসে আনোয়ার হোসেনকে বেঁধে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। তখন সেলিম আহমদ, আনোয়ারুল আজিম আকাশ, মাফিনুর নামের আরও তিনজন ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। পরে থানায় মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারের পর শফিকুল, ছয়ফুল্লাহ ও সাইদুর রহমান ১৬৪ ধারায় আদালতে  স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
আদালত মামলার রায়ে আসামি আনোয়ার হোসেন, ছয়ফুল্লাহ, ছাইদুর রহমান ও শফিকুলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই নারী পাবেন।

ছাতকে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ওই দিন রাত ১১টায় ছাতকের একটি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ওই তরুণী অপহৃত হন। তাঁকে সিলেটে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরে ছাতকে এসে ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে ইকবাল হোসেন ও জয়নাল আবেদীন নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপহরণের পর ধর্ষণের এই মামলার রায়ে ইকবাল হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং জয়নাল আবেদীনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।