নির্মাণাধীন সড়কের ধুলায় মানুষের ভোগান্তি

পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা এলাকা থেকে শহরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার চার লেন হচ্ছে।

সামান্য বাতাস বা যানবাহন চলাচল করলেই ধুলাবালুতে ভরে যায়। সম্প্রতি রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মিঠাপুকুর উপজেলার দমদমা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরে নির্মাণাধীন চার লেন সড়কের ধুলার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন আশপাশের বাড়ি ও দোকানপাটের মানুষ। তীব্র গরমে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের অধীন গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো হলেও তা ভোগান্তি কমাতে পারছে না।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা এলাকা থেকে শহরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৪ কিলোমিটারের নির্মাণকাজ চলমান।

চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক (নির্বাহী প্রকৌশলী) জাভেদ তালুকদার জানান, ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ২৪ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণকাজের দরপত্র হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। ২০২২ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বাড়ানো হয়।

শহরের মডার্ন মোড় থেকে মিঠাপুকুরের দমদমা হয়ে বৈরীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের এক পাশে নির্মাণকাজ হলেও অন্য পাশে মাটি ও ধুলা রয়েছে। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলছে। সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে ধুলাবালু। ধুলা থেকে বাঁচতে বাসের যাত্রীরা প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও জানালা বন্ধ করে রাখছেন।

ধুলার কারণে মোটরসাইকেলের চালকেরা বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। এ পথ দিয়ে নিয়মিত মোটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে যান রশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রায়ই এ পথে যেতে হয়। মাথায় হেলমেট রয়েছে। মুখে রয়েছে মাস্ক। এরপরও নাকেমুখে ধুলা চলে যায়। কাপড় ধুলাবালুতে একাকার হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে কিছুটা উপকার হতো।

একই সঙ্গে নির্মাণাধীন সড়কের দুই পাশের বাসিন্দারা দুরবস্থায় আছেন। ধুলা থেকে বাঁচতে তাঁরা ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে থাকেন। তারপরও ধুলাবালু ঘরে ঢুকে যায়। এ ছাড়া সড়কের পাশের দোকানিরা একই সমস্যায় রয়েছেন।

নির্মাণাধীন সড়কের পাশে বৈরীগঞ্জ এলাকার একটি খাবারের দোকানের মালিক বকুল মিয়া বলেন, ‘ভাত, মাছ ও মাংস বিক্রি করি। রাস্তার কাজ হলেও অনবরত গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার ধুলাতে অস্থির হয়া গেছি। টিকি থাকা মুশকিল।’

এদিকে রংপুরে এক সপ্তাহ আগে সামান্য বৃষ্টি হয়। বর্তমানে বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। প্রচণ্ড রোদ ও খরতাপ। এ পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন সড়কের পাশে আরও বেশি ধুলাবালু উড়ছে।

দমদমা এলাকায় সড়কের পাশের চা-বিস্কুটের দোকানের মালিক শাহজাহান আলী বলেন, ‘কী আর করা যাবে। কষ্ট হইলেও এমন করিয়া ব্যবসা করা লাগবে। তা–ও মহাসড়কের কাজ শেষ হউক।’

ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে গাড়ি দিয়ে পানি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচণ্ড খরতাপে তা সঙ্গে সঙ্গে মাটি চুষে নেয় বলে জানালেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাভেদ তালুকদার।

এ ধুলা থেকে কী ধরনের রোগ হতে পারে এবং এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ধুলা থেকে ডাস্ট অ্যালার্জি ও ফুসফুসের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খাবারে জীবাণু যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে খাবার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়া মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।