মনোহরদীতে শিল্পমন্ত্রীর ভাইয়ের পক্ষে জাল ভোট, এজেন্টকে মারধর করলেন মেয়র

মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপনের পক্ষে শতাধিক জাল ভোট মারার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে উপজেলার পাঁচকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল মজিদ মাহমুদের (স্বপন) পক্ষে শতাধিক জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁর কর্মী মনোহরদীর মেয়র আমিনুর রশিদের (সুজন) বিরুদ্ধে অপর একটি কেন্দ্রের ভোটকক্ষে ঢুকে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টকে চড়থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে মনোহরদী উপজেলার পাঁচকান্দি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক জাল ভোট দেওয়ার ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরদার আসমত আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এজেন্টকে পৌর মেয়রের চড়থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিবা খান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা একটার দিকে শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল মজিদ মাহমুদের একদল কর্মী-সমর্থক প্রায় ভোটারশূন্য পাঁচকান্দি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে শতাধিক ব্যালট পেপারে জাল ভোট দেন। পরে বেশ কিছু ব্যালট ভাঁজ করে বাক্সে ভরেন তাঁরা। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্য প্রার্থীদের এজেন্টরা বাধা দিলে জাল ভোট মারা অর্ধেক বই পোলিং কর্মকর্তার সামনে রেখেই চলে যান তাঁরা।

পাঁচকান্দি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জি এম পন্নী বলেন, ‘জোর করে কক্ষে ঢুকে আনারস প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। ওই সময় আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। বিষয়টি এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরদার আসমত আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে একদল কর্মীকে নিয়ে প্রবেশ করেন মনোহরদীর পৌর মেয়র আমিনুর রশিদ। এ সময় বেশ কিছু সংখ্যালঘু ভোটারকে গালিগালাজ করেন তিনি। একপর্যায়ে একটি ভোটকক্ষে গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায়ের এজেন্ট বিশ্বজিৎ রায়কে দেখতে পান। তাঁকে দেখতে পেয়েই ‘এখানে কী করিস’ বলে চড়থাপ্পড় মারা শুরু করেন পৌর মেয়র। এতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বজিত রায় বলেন, ‘ভোট চলাকালে কেন্দ্রে ঢুকে পৌর মেয়র আমাকে প্রশ্ন করেন, ভোটকেন্দ্রে কী করি। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায়ের এজেন্ট বলার পরই তিনি বলেন, “তর কী জানের মায়া নাই, তুই মোটরসাইকেলের এজেন্ট কেন?” এ কথা বলেই আমাকে চড়থাপ্পড় মারেন তিনি। আমি বাড়ি ফিরতে পারব কি না, আতঙ্কে আছি।’

সরদার আসমত আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র সরকার জানান, তাঁর কেন্দ্রে ঢুকে বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন পৌর মেয়র আমিনুর রশিদ। বিষয়টি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবগত করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে শিল্পমন্ত্রীর ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ ও মনোহরদীর পৌর মেয়র আমিনুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাঁরা ধরেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রিয়াশীষ রায় বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে আমার এজেন্টকে মেয়রের মারধরই প্রমাণ করে, তারা ভোটে প্রভাব বিস্তার করছে।’

মনোহরদীর ইউএনও হাসিবা খান প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচকান্দি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট মারার পর বাইরে থাকা ব্যালট পেপারগুলো জব্দ করা হয়েছে। আর বাক্সের ভেতরে ফেলা জাল ভোটগুলো বাতিল করা হবে। আর সরদার আসমত আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এক এজেন্টকে মেয়রের মারধরের ঘটনা শুনে সেখানে গেছেন ইউএনও। ওই এজেন্ট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।