হত্যাকাণ্ডের শিকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ, দাবি স্বজনদের
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুর থেকে উদ্ধার শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
সাজিদের মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে দাবি করছে তাঁর পরিবার। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মনে করছেন স্বজনদের কেউ কেউ।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ভাসমান অবস্থায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। সাজিদ আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌর এলাকায়।
পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, সাজিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানান।
ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের মসজিদে সাজিদ আবদুল্লাহ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর সাজিদের লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি আটকে দেন তাঁর সহপাঠীরা। তাঁরা দাবি করেন, সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে জানাতে হবে। এ নিয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁদের বাদানুবাদ হয়। এ সময় তাঁর এক সহপাঠী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যান। স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় এক ঘণ্টা লাশ আটকে রাখেন তাঁরা।
সাজিদের সহপাঠী ইনসান উল ইমাম প্রচণ্ড রোদের মধ্যে লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তিনি বলতে থাকেন, ‘সাজিদের সঙ্গে আমার সাত বছরের বন্ধুত্ব। সে পানিতে ডুবে মরতে পারে না। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে হবে। তা ছাড়া আমার বন্ধুর লাশ ক্যাম্পাসে নিয়ে যাব।’
সাজিদের সহপাঠীরা জানান, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা অচল। হলসহ ক্যাম্পাসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করে না। তা ছাড়া সাজিদ যে কক্ষে থাকতেন, সেখানে আরও দুজন থাকতেন। তাঁরাও দুদিন আগে বাড়ি চলে যান। সাজিদ কখনোই একা গোসল করতে যাওয়ার কথা নয়। এমনকি গোসল করতে গেলে তাঁর পোশাক নিয়ে যেতেন, তা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সাজিদের মুঠোফোন তাঁর কক্ষে পাওয়া গেছে। ওই ফোনে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফোন দিলে রিসিভ হয়। ২৪ সেকেন্ড পর কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কথা বলে না। সব মিলিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন বিষয়গুলো নিয়ে উদাসীন। প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। হলে হল প্রভোস্ট থাকেন না। এমনকি হাউস টিউটরও থাকেন না।
সাজিদের লাশ নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার, মামা জাকির হোসেনসহ আরও কয়েকজন স্বজন। পরিবার সূত্র বলছে, আহসানের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সাজিদ সন্তানদের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি কোরআনে হাফেজ। ভালো সাঁতার জানতেন।
সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন আগে ফরম পূরণের জন্য বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়েছি। গত বুধবার ফোনে কথা হয়েছিল। পানিতে ডুবে মারা যাবে বা আত্মহত্যা করবে, এটা মানতে পারছি না। কোনো ঘটনা থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি থাকল, যেন সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করে।’
সাজিদের মামা জাকির হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাগনে খুবই ভালো সাঁতার জানত। তার মৃত্যু রহস্যজনক। সুবিচার চাই।’
সাজিদের আত্মীয় এ টি এম নজরুল ইসলাম গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার আশা করি। সাজিদকে মেরে পানিতে ফেলা হয়েছে।’
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সংগঠন করত না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ছেলেদের কাছ থেকে তার (সাজিদ) কাছে দুয়েকবার থ্রেট আসছে, ছাত্রশিবির করার জন্য। কিন্তু সে বলত, ছাত্রশিবির করবে না। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় সে ছাত্রশিবির করত। কয়েকবার তার গায়ে হাত তোলা হয়েছে। আমরা তাদের নামসহ পরবর্তী সময়ে উল্লেখ করব।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মসজিদের সামনে ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহদুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন,‘সংগঠনে আনতে চাপ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যিনি আত্মীয় (নানা) পরিচয়ে অভিযোগ করছেন, তিনি কেমন আত্মীয় জানি না। আপনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এটা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।’
লাশ হস্তান্তরের সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. শাহিনুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই আন্তরিক। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হবে। ইতিমধ্যে প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা নেওয়া হবে।
লাশের ময়নাতদন্ত করেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হামিদুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, লাশের কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।