বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
ভালোবাসার জোয়ার তিনজনের সংসারে
মনিরুল–মাসুরা দম্পতির মেয়ে মরিয়ম। আট বছর বয়সে সে উচ্চতায় মাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ছেলের উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। মেয়ের ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি। উচ্চতার এই ব্যবধান তাঁদের সংসারে কোনো সমস্যা তৈরি করেনি। ভালোবাসার রঙে রঙিন এই পরিবারে নতুন অতিথি হয়ে এসেছে মেয়ে মরিয়ম। গত আট বছরে সে উচ্চতা মাকে ছাড়িয়ে গেছে। অভাব-অনটনের মধ্যেও তিনজনের সংসারে নেই ভালোবাসার কমতি।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৪০) রাজশাহীর পবা উপজেলার বজরাপুর গ্রামের মাসুরা খাতুনকে (৩৫) বিয়ে করেছিলেন মেয়ের পরিবারের অমতে। আজ থেকে ১৮ বছর আগের কথা। ইটভাটায় কাজ করতে রাজশাহীর পবায় আসেন তিনি। ইটভাটার পাশেই ছিল মাসুরার বাড়ি। তিনি তখন ইটভাটায় যাওয়া-আসা করতেন। একসময় মাসুরার প্রতি তাঁর মনে অদ্ভুত এক মায়া জন্ম নেয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। একদিন তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বিয়েতে ছেলের পরিবারের আপত্তি না থাকলেও বাদ সাধে মেয়ের পরিবার। তাদের মনে ভয় ছিল, বিয়ে করে ছেলে কয়েক দিন পর মাসুরাকে ফেলে না চলে যায়।
সব বাধা পেরিয়ে মনিরুল ও মাসুরা বিয়ে করেন। মনিরুল জানান, বিয়ের পর তাঁরা মাসুরার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। একদিন মাসুরার পরিবারের লোকজন তাঁদের ওপর হামলার চেষ্টা করেছিলেন।
তবে মনিরুল-মাসুরার ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত সব বাধাকে জয় করেছে। এক বছর, দুই বছর দেখতে দেখতে আট বছর পার হয়ে যায়। মেনে নেন মাসুরার চাচা। মনিরুলকে বাড়ি করতে একখণ্ড জমি দেন তিনি। সেখানে একটা ছোট্ট ঘর করে এখন বসবাস করছেন এই দম্পতি। তাঁদের এই ভালোবাসার গল্প ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘ভাটার জীবনে ভালোবাসার জোয়ার’ শিরোনামে ছাপা হয়েছিল।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজশাহীর পবা উপজেলার বজরাপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এই দম্পতিকে পাওয়া যায়। মনিরুল এখন বাড়ির পাশেই ইটের ভাটায় কাজ করেন। মেয়ে মরিয়ম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মনিরুলের মনে একটা দুঃখ আছে। তাঁর চাচাশ্বশুর বাড়ি করার জন্য জমি দিয়েছিলেন। এখন তাঁরা সেই জমি নিতে চাচ্ছেন। মনিরুল বলেন, ‘ ডিসি স্যার নতুন বাড়ি দিতে চেয়েছেন। নতুন বাড়িতে গিয়ে উঠব।’