গাজীপুরে কেন বাতিল হলো প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থিতা বাতিল হওয়া জামিল হাসান (দুর্জয়)ছবি: সংগৃহীত

একাধিকবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের শুনানি শেষে বাতিল হয় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানের (দুর্জয়) প্রার্থিতা। গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।

জামিল হাসান শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর বড় ভাই। তিনি ওই নির্বাচনী আসনের টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রহমত আলীর ছেলে। এ ছাড়া তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল প্রথম জামিল হাসান আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। সে সময় তিনি বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জড়ো করে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোডাউন ও মিছিল করেছিলেন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের বাইরেও প্রার্থীর সমর্থনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল করা হয়। নির্বাচন কমিশন তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

একই মাসে ২৭ এপ্রিল নির্বাচনী এলাকার বাইরে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা দিতে হয়েছিল জামিল হাসানের এক কর্মীকে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি শ্রীপুর নির্বাচনী এলাকার পাশের গাজীপুর সদর নির্বাচনী এলাকার বাঘেরবাজারের সাবাহ গার্ডেনে এক মতবিনিময় সভা করেন। সে সময় বিষয়টি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে এলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক মজনুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীর কর্মী আক্তার হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

চলতি মাসের ৭ মে মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে নির্বাচনী সভায় ভোটারদের খাবার বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে জামিল হাসানের কর্মীকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। জরিমানার সময় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সেদিন সেখানে নগরহাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ভোটার ও নেতা-কর্মী জড়ো করেন ওই প্রার্থী। এ সময় সভাস্থলের পাশে ভোটারদের খাওয়ার জন্য খাবার রান্না করা হয়। এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাইখা সুলতানা। তিনি আইন অনুযায়ী প্রার্থীর কর্মী হারুন অর রশিদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে সভা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে সভাস্থলের প্যান্ডেল খুলে ফেলেন। এ সময় রান্না করা খাবার জব্দ করে সেগুলো স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করে দেন।

ফেরার পথে শাইখা সুলতানা খবর পান, নির্দেশ না মেনে সভা চালানো হচ্ছে। পরে তিনি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শোভন রাংসাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। প্রার্থীর এক কর্মীকে আইনের আওতায় জরিমানা করতে যান। তখন সেখানে প্রার্থী জামিল হাসান উপস্থিত হয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) হুমকি দেন।

১০ মে তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতিরবাজারের ক্রিয়েটিভ স্কুলমাঠে আইন লঙ্ঘন করে লোকজন জড়ো করে নির্বাচনী সভা করেন জামিল হাসান। এ ছাড়া তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা হয়, সে কারণে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হাসানকে (দুর্জয়) এখন পর্যন্ত দুবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর কর্মীদের দুই দফা জরিমানা করা হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন।