ফুলের মাঝে উপাচার্যের ছবি, আলোচনা–সমালোচনা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। ওই পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আর সেই সব ফুলের তোড়া চারপাশে সাজিয়ে ছবি তোলেন তিনি। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছিলেন উপাচার্য। তবে ছবিটি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হওয়ার পর তিনি ফেসবুকের সেই পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ৪ মার্চ নতুন উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পান। তিনি ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের ৮ নভেম্বর আগের উপাচার্যের মেয়াদ হওয়ার পর বদরুজ্জামান ভূঁইয়া উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

এ বিষয়ে আজ বুধবার উপাচার্য বদরুজ্জামান ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শিক্ষাথী, শিক্ষকসহ অনেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। পরে এসব ফুলের তোড়া সরিয়ে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছিল। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কেউ কেউ ওই ছবি তুলেছিলেন। এটা নিছক আবেগ ও ভালোবাসার বিষয়। এখন এটা উপলক্ষ করে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, সেটা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক। যা আমাদের কাম্য হতে পারে না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষার্থী উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার ওই ছবি পোস্ট করেন। পরে ছবিটি উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়া নিজ ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেন। তবে সমালোচনা শুরু হলে তিনি ফেসবুক থেকে ছবিটি সরিয়ে ফেলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে তাঁর ফেসবুকে ওই ছবি দেখা যাচ্ছে না। তবে এই ছবি অনেকেই ডাউনলোড করে পোস্ট করেছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা–সমালোচনা অব্যাহত আছে।

ওই ছবিতে দেখা যায়, উপাচার্য তাঁর অফিস কক্ষের চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর চারপাশে অসংখ্য ফুলের তোড়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি নিয়ে ফেসবুকে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কেউ করেছেন নেতিবাচক মন্তব্য। ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে অনি আতিকুর রহমান নামের একজন লিখেছেন,‌ ‘অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, এমআইটিতে বাংলাদেশের ভিসি সমপর্যায়ের পদে কেউ নিয়োগ পেলে, তিনিও কি এভাবে সংবর্ধিত হন?’ সাজ্জাদ কাদির নামের আরেকজন ছবিটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘এই লোকটা ফুলের রাজ্যে পদ্যময় হয়ে গেল দেখছি। লোকটা নাকি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছেন! একটা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সেন্টিমেন্ট এত নিম্নমানের হতে পারে কল্পনা করা যায় না।’

উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অন্তত ২০ জন শিক্ষক ফেসবুকে এমন পোস্ট করেছেন। তবে কেউ ওই ছবি পোস্ট করেননি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশিক এলাহী ‘রুচির সংকট আর তেলের আধিক্য!’ শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, ‘প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি স্যারের প্রতি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ইতিমধ্যে আস্থার আসন অলংকৃত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে ময়লার স্তূপ থেকে যিনি ফুলে ফুলে শোভিত করেছেন। ...অথচ কিছু কুচক্রী তাঁর এই নিষ্ঠা ও সৌন্দর্যবোধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রুচিবোধ, ইচ্ছেশক্তি এবং প্রচেষ্টা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। সেটাই প্রমাণ করলেন অধ্যাপক বদরুজ্জামান ভূঁইয়া স্যার, মাননীয় উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। স্যারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’