সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঢাকা-ডামুড্যা নৌপথের যাত্রীবাহী লঞ্চ স্বর্ণদ্বীপের তিন যাত্রী নিহতের ঘটনায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিহত তানজিলের বাবা শাহ আলী মোল্যা। এতে তিনি লঞ্চের মালিক, মাস্টার, চালকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেন। এদিকে হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের লাশ নিয়ে রাত আটটার দিকে গ্রামে রওনা হয়েছেন স্বজনেরা।
রোববার ভোরে গোসাইরহাট উপজেলার সাইক্কা এলাকার জয়ন্তিয়া নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তানজিলের বিয়ে উপলক্ষে তাঁর দুই বন্ধু গোসাইরহাটে এসেছিলেন। তানজিলদের বাড়ি গোসাইরহাটের কেদালপুর গ্রামে। দুর্ঘটনায় তানজিল ও তাঁর দুই বন্ধু মারা গেছেন। তাঁরা হলেন জামালপুরের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী (২৩) ও টাঙ্গাইলের নাজিমউদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ (২৩)। তাঁরা গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
গোসাইরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত এক যাত্রীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় স্বর্ণদ্বীপ লঞ্চের মাস্টার নুরুজ্জামান ও চালক ইমরান হোসেন ব্যাপারীকে আটক করা হয়েছে। লঞ্চটি জব্দ করে গোসাইরহাটের পট্টিঘাটে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, তানজিলের বিয়ে উপলক্ষে তাঁরা শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে স্বর্ণদ্বীপ লঞ্চে গোসাইরহাটের উদ্দেশে রওনা হন। ভোররাতের দিকে মেঘনা নদী থেকে লঞ্চটি জয়ন্তিয়া নদীতে প্রবেশ করে। তখন নদীতে জোয়ার চলছিল। ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। অসতর্কভাবে লঞ্চ চালানোর কারণে গোসাইরহাটের সাইক্কা এলাকায় সেতুর সঙ্গে লঞ্চের তৃতীয় তলায় থাকা পানির ট্যাংকের সজোরে ধাক্কা লাগে। ওই পানির ট্যাংক ছিটকে ঘুমন্ত যাত্রীদের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তানজিল, শাকিল ও সাগর প্রাণ হারান। রাত আটটার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তাঁদের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর নিথর দেহ নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হন স্বজনেরা।
নিহত শাকিলের ভাই সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টাঙ্গাইলে থাকি। ভাই গাজীপুরে একটি কলেজে পড়ালেখা করত। দেড় মাস আগে একটি গার্মেন্টসে কাজ শুরু করে। বন্ধুর বিয়েতে এসে এভাবে প্রাণ হারাবে, ভাবতে পারিনি।’
সাগরের চাচা রনি মিয়া বলেন, সাগর বন্ধুদের সঙ্গে থেকে পড়ালেখা ও কাজ করতেন। বন্ধুরা মিলে আরেক বন্ধুর বিয়েতে এসে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে গ্রামে তাঁর মা-বাবা পাগলপ্রায়। ছেলের নিথর দেহ দেখে তাঁরা কীভাবে সহ্য করবেন?
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুর নৌবন্দরের কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। এ ঘটনায় কার কী অবহেলা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বর্ণদ্বীপ লঞ্চের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে।