গোয়ালন্দের ‘বিষফোড়া’ দৌলতদিয়ার পোড়াভিটা

রাজবাড়ী জেলার মানচিত্র

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিসংলগ্ন পোড়াভিটার মালিক রাজবাড়ী পৌরসভা। পোড়াভিটার প্রায় দেড় শ পরিবারের অধিকাংশই বহিরাগত এবং মাদক কারবারি। এখানে হচ্ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পোড়াভিটাকে সমাজের ‘বিষফোড়া’ উল্লেখ করে প্রতিকারের দাবি জানানো হয়।

জায়গার মালিক রাজবাড়ী পৌরসভা হলেও উপজেলা প্রশাসনের জানা ছিল না। ওই জায়গায় কারা ঘর তুলে ভাড়া দেন, কারা নিয়ন্ত্রণ করেন—জানা নেই। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পোড়াভিটার জায়গায় করণীয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানা সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৭ মাসে পোড়াভিটাসংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ ৫ হাজার ৩৫০টি ইয়াবাবড়ি, ১০ কেজি ৩৫০ গ্রাম গাঁজা, ৭৪৫ গ্রাম হেরোইন, ২ বোতল বিদেশি মদ, ৪৩০ লিটার দেশি মদ, ৯১৭ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে। এই আট মাসে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৪৪টি মামলাও হয়েছে।

গোয়ালন্দঘাট থানা সূত্র আরও জানায়, ১২ আগস্ট রাতে পোড়াভিটা থেকে ৫ লাখ টাকার ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ মাদক ব্যবসায়ী রোজী বেগম ও তাঁর সহযোগী হেলেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানায় রোজীর বিরুদ্ধে ৯টি ও হেলেনার বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। এখানে রোজী বেগম, হেলেনা, শাপলা, শাহানাজ বেগম, শেফালী, লাইলা, শহিদ শেখ, রাজ্জাক, উজ্জলসহ ২৫-৩০ জন হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানা প্রকার মাদক কারবারে জড়িত। মাদক কেনার জন্য কিশোর, তরুণ ও যুবকেরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, গত সাড়ে সাত মাসে পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করেছে।

এর মধ্যে শুধু দৌলতদিয়া পোড়াভিটা এলাকা থেকে ১ জানুয়ারী থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।

পোড়াভিটায় মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়ায় আগস্ট মাসের উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ১৬ আগস্ট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ইউএনও মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ওই সভা হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস পারভীন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহমানসহ উপজেলার অন্যান্য ইউপির চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় পোড়াভিটার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, যৌনপল্লিতে ৩০০ টাকার একটি বিয়ার ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই ব্যবসা করে কারা কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, সবার জানা। পোড়াভিটা নিয়েও অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এই সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিনের সমস্যা পুষে রাখায় পোড়াভিটা ‘বিষফোড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক দূর করতে সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়তে হবে। এ জন্য তিনি প্রশাসনের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, পোড়াভিটা একদিনে হয়নি। নিয়মিত অভিযান চালানোয় অনেক অফিসার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসবের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। প্রতি মাসে ২৫-৩০ জন গ্রেপ্তার হলেও আদালত থেকে জামিনে এসে পুনরায় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘পোড়াভিটা জায়গাটি রাজবাড়ী পৌরসভার। তাদের সঙ্গে করণীয় নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেব। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’