ছবি এঁকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা পুরস্কার পেল সুবর্ণা

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম তাঁর কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে সুবর্ণা আক্তার ও তাঁর বাবা সফিউল আলমের হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেনছবি: প্রথম আলো

প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঈদকার্ডে স্থান পায় দেশের বিভিন্ন এলাকার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আঁকা ছবি। এরই অংশ হিসেবে ২০২২ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয় প্রতিবন্ধী শিশু সুবর্ণা আক্তারের আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্যের একটি ছবি। সেই ছবি ঈদকার্ডে স্থান না পেলেও প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন। সুবর্ণার নামে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন তিনি।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম গতকাল রোববার বিকেলে তাঁর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই এক লাখ টাকার চেক সুর্বণা ও তাঁর বাবার হাতে তুলে দেন। এ সময় বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজিরসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সুবর্ণা (১৩) বোদা উপজেলা শহরের বাসিন্দা ফল বিক্রেতা সফিউল আলমের মেয়ে। চার ভাই–বোনের মধ্যে সুবর্ণা তৃতীয়। সে বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই হাঁটতে ও কথা বলতে সমস্যা হয় সুবর্ণার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই সে ছবি আঁকে। বোদা পৌরসভার সর্দারপাড়া এলাকায় আড়াই শতক জমিতে ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো জমিজায়গা নেই সফিউল আলমের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে বোদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের একটি ছবি এঁকে ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছিল সুবর্ণা। ওই সময় ঈদকার্ড তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সারা দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছিল। তখন সুবর্ণার ছবিটিও পাঠানো হয়েছিল। ছবিটি ঈদকার্ডে স্থান পায়নি। তবে ছবিটি পছন্দ হওয়ায় সুবর্ণার নামে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী। এর কিছুদিন পর সুর্বণার বাবার কাছে ফোনও এসেছিল। কিন্তু তিনি আর খোঁজ নেননি। একপর্যায়ে চেকটি ফেরত গিয়েছিল।

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে সুবর্ণার বাবার কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি ফোন এসেছিল। তবে তিনি আর খোঁজ নেননি। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক লাখ টাকার চেকসহ একটি চিঠি এসেছিল আমাদের কাছে। একই সঙ্গে সুবর্ণার পরিবারের কাছেও একটি চিঠি আসার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণে তাঁরা সেটি পাননি। এরই মধ্যে চেকটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসন থেকে চেকটি রি-ইস্যু করে পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপর আবার এক লাখ টাকার চেক পাঠানো হয়। বাবা-মেয়ের হাতে চেক তুলে দিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’

চেক পাওয়ার পর সুবর্ণা আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। নদী, গাছপালা, বাড়ি ও বাড়ির পাশে রাস্তার ছবি এঁকে জমা দিয়েছিলাম। সেই ছবির জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন। আমি তাঁর জন্য দোয়া করি।’

সুবর্ণার বাবা সফিউল আলম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারিনি। কিন্তু দুই মেয়ে স্কুলে পড়ছে। এই টাকার জন্য আমার কাছে একবার ফোন এসেছিল। ভেবেছিলাম কেউ হয়তো প্রতারণা করবে। এ জন্য গুরুত্ব দিইনি। পরে ডিসি অফিস থেকে আমাকে ডেকে চেক দিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।’