ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ, সংযোগ দেওয়ার সময় গুলি করা হয় মঞ্জু আর বখতিয়ারকে
নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারি কাপড়ের হাট শেখেরচর-বাবুরহাটের একটি দোকানঘরে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছিলেন মঞ্জু মিয়া আর বখতিয়ার উদ্দিন। খবর পেয়ে সমর্থকদের নিয়ে সেখানে যান যুবদল নেতা আকরাম হোসেন। ওই এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়া আকরাম কোমর থেকে পিস্তল বের করে বখতিয়ার ও মঞ্জুকে গুলি করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মঞ্জু মারা যান।
নিহত মঞ্জু ও আহত বখতিয়ারের পরিবারের সদস্যরা নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে আজ দুপুরে এই প্রতিবেদকের কাছে ওই ঘটনার এমন বর্ণনা দেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মঞ্জুর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেলে জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে শেখেরচর-বাবুরহাট হাটের ভেতরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হন মঞ্জু মিয়া (২২) এবং আহত হন বখতিয়ার উদ্দিন (৩৫)। মঞ্জু মিয়া মাধবদী থানার পৌলাণপুর এলাকার মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। আহত বখতিয়ার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি। তাঁরা দুজনই যুবদল নেতা ইফতেখার আলম ওরফে বাবলার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্য সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ও শিলমান্দী ইউনিয়নে ডিশ, ইন্টারনেট ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই যুবদল নেতার মধ্যে বিরোধ চলছে। এসব ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন মেহেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ইফতেখার আলম ওরফে বাবলা। অন্যদিকে ব্যবসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চান মেহেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন। সম্প্রতি শেখেরচর-বাবুরহাটের কয়েকটি বিট (দোকানঘর) দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টি মীমাংসার জন্য গতকাল রাতে দুই পক্ষের সালিস বৈঠকে বসার কথা ছিল। তিন দিন আগে ইফতেখারের ছোট ভাই জ্যোতিকে মারধর করেন আকরাম ও তাঁর সহযোগীরা।
গতকাল রাত ৯টার দিকে বখতিয়ার ও মঞ্জু হাটের ভেতরে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছেন, এমন খবর পেয়ে সমর্থকদের নিয়ে সেখানে যান আকরাম। বখতিয়ার ও মঞ্জুকে দেখে উত্তেজিত আকরাম গুলি ছুড়লে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে ইফতেখার লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মঞ্জু ও বখতিয়ারকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে রওনা দেন। পথে পাঁচদোনা এলাকায় পৌঁছানোর পরই মঞ্জুর মৃত্যু হয়।
মঞ্জুর লাশ হাসপাতালে না নিয়ে শেখেরচর-বাবুরহাট বাসস্ট্যান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ খবর পেয়ে মাধবদী থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত যুবদল নেতা আকরাম হোসেনের মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ইফতেখার আলমকে মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।