সেতু না থাকায় আট কিমি ঘুরে চলাচল

নীলফামারী সদর উপজেলার টেংনারগড় গ্রামের বুড়িখোড়া নদীর সেতু নেই। এখানে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পাঁচ হাজার মানুষ।

নীলফামারী জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের টেংনার গড় গ্রামে ভেবারঘাট এলাকায় বুড়িখোড়া নদীর ওপর সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের টেংনারগড় গ্রামে ভেবারঘাট এলাকায় বুড়িখোড়া নদীর ওপর কোনো সেতু নেই। এখানে সেতু না থাকায় নদীর উত্তর পাড়ের লোকজনকে আট কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হচ্ছে। বর্ষাকালে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হতে গিয়ে ভোগান্তি পোহায় মানুষ। এই পরিস্থিতিতে এখানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 টেংনারগড় গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে নৌকায় পারাপার হয়ে জলঢাকা ও নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া-আসা করছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। এখানে মাত্র ৬০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এ পথে চলাচলকারীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এই অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।

টুপামারী ইউনিয়নের সীতারপাঠ গ্রামের ব্যবসায়ী মো. ফরহাদ রানা (৩০) বলেন, ‘ভেবারঘাটে একটি সেতু হওয়া খুবই জরুরি। এটা আমাদের এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। বর্ষা মৌসুমে এই ঘাট দিয়ে নদী পারাপারের প্রধান ভরসা নৌকা। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে করা হয় বাঁশের সাঁকো। তাতে ভ্যান, রিকশা ও যানবাহন পারাপার করা যায় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের মানুষকে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার ঘুরে জেলা সদরে যাওয়া-আসা করতে হয়। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেতু হয় না।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, নীলফামারী জেলা সদর থেকে রামগঞ্জ যাওয়ার পথে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে সরকারপাড়া জামে মসজিদ। ওই মসজিদের সামনে দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে পূর্ব দিকে সীতারপাঠ গ্রাম হয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার এগোলে টেংনারগড় গ্রাম। ওই গ্রামে বুড়িখোড়া নদীর ভেবার ঘাট।

ইউনিয়নের নিত্যানন্দী গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ রায় বলে, ‘আমি রামগঞ্জ ওসমানগণি হাইটেক রেসিডেন্ট মডেল বিদ্যালয়ে পড়ি। নদীতে সেতু না থাকায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ছয় কিলোমিটার পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে এখানে বাঁশের সাঁকো করা হলেও ওই সাঁকো বেশি দিন টেকে না। সাঁকো পার হওয়ার সময় অনেক ছাত্রছাত্রীর নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেতুটা হলে আমরা শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হব।’ প্রসেনজিৎ বলে, প্রতিবছর এ সময় সাঁকো বানানো শুরু হলেও এবার এখনো সাঁকো হয়নি।

একই গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নুর আলম বলে, ‘কত জাগাত কত পুল (ব্রিজ) হয়, হামার পুলখান হয় না। পুল হলে হামার স্কুলের দূরত্ব হবে দুই কিলোমিটার। এখন যাওয়ার লাগে আট কিলোমিটার ঘুরে।’

নীলফামারী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও রামগঞ্জ বিএম কলেজের প্রভাষক আবদুল হান্নান বলেন, বুড়িখোড়া নদীর উভয় প্রান্তের প্রায় ১০ হাজার মানুষ ওই পথে চলাচল করে। বিশেষ করে নিত্যানন্দী ও ডাউয়াবাড়ি গ্রামের শিক্ষার্থীরা ওই নদী পার হয়ে জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। সেতু না থাকায় কোনো যানবাহন চলাচল করে না এ পথে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার পথ ঘুরে তারা স্কুল কলেজে যাতায়াত করে। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। রাতের বেলা কেউ অসুস্থ্ হলে বেশি বিপদে পড়তে হয়। তখন নৌকাও থাকে না। সেখানে একটি সেতুর ব্যাপারে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন, কিন্তু হচ্ছে না। সেতুটা হওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নীলফামারী কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এর আগে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে ৬০ মিটার একটি সেতু করা দরকার। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’