সিলেট নগরের প্রবেশমুখ অবরোধ করে পরিবহনশ্রমিকদের বিক্ষোভ

‌সিলেট নগরের প্রবেশপথ অবরোধ করে রেখেছেন প‌রিবহনশ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার নগরের ম‌দিনা মার্কেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের প্রবেশমুখগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবরোধ করেছে রেখেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে তাঁরা পরিবহনশ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও মহানগর পুলিশ কমিশারকে প্রত্যাহার করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছেন। এতে নগরজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে রাতে ঘরে ফিরতে না পেরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শহরতলিসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পর পরিবহন শ্রমিকেরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।

পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানায় মারধর ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে লেগুনাশ্রমিক মো. শাহাব উদ্দিন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম, জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল মিয়া মইনসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকনেতাদের পক্ষ থেকে শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দেওয়া হয়।

পরিবহন শ্রমিকনেতাদের পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের পাঁচটি এলাকা অবরোধ করে রাখে পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে নগরের মধ্যে কোনো যানবাহন ঢুকতে এবং নগর থেকে কোনো যানবাহন বের হতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের কিনব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে কদমতলী এলাকায় সড়কে বাস দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এতে ওই সেতু পার হয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করতে পারছে না। এ সময় পথচারীদের যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে।

হেঁটে দক্ষিণ সুরমার দিকে যাচ্ছিলেন নিজাম উদ্দিন (৫৫)। এ সময় তিনি বলেন, জিন্দাবাজার এলাকায় কাজ শেষ করে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়কে বন্ধ পেয়েছি। পরে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছি।

অন্যদিকে নগরের টিলাগড়, শাহজালাল ব্রিজ ও মদিনা মার্কেট এবং তেমুখী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে থাকতে দেখা গেছে। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়কগুলো অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। নগরের প্রবেশপথগুলো অবরোধ করে রাখায় নগরের অভ্যন্তরেও এর প্রভাব দেখা গেছে। নগরের বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট, মদিনা মার্কেট এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নামে মামলা হওয়ার খবর পেয়ে বিকেলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন শ্রমিকনেতা সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তিনি তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁদের বলেছেন, মামলা হয়েছে আসামিও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি আরও মামলা দেওয়ার হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘যে অভিযোগে একজন শ্রমিক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, সেটি বানোয়াট। তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ দিয়েছি।’

মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলা এবং পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করার দাবিতে অবরোধ করেছি। এ দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, পরিবহন শ্রমিকনেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলাগুলো তদন্ত করছে। ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় হঠাৎ করেই পরিবহনশ্রমিকেরা এমনটি করছেন।

সিলেটে প‌রিবহন শ্রমিকদের অবরোধ প্রত্যাহার আহ্বান জা‌নিয়েছে মহানগর পু‌লিশ। সে সঙ্গে প‌রিবহন শ্রমিকদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাতেই পু‌লিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনু‌ষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করেছেন সিলেট মহনাগর পু‌লিশের অতি‌রিক্ত উপক‌মিশনার (গণমাধ‌্যম ) সুদ্বীপ দাস।