দিনমজুর থেকে চেয়ারম্যান ‘কোটি কোটি টাকার মালিক’ হলেন কীভাবে

গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের গড়চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা ও যুবলীগ কর্মী কামাল হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

‘২০০৫ সালেও যিনি অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন, দুই কাঠা ভিটে ছাড়া সম্পদ বলতে যার তেমন কিছুই ছিল না, তিনি এখন নিজ গ্রামে ৩০ বিঘা জমির মালিক। চুয়াডাঙ্গা শহরেও বাড়ি তৈরির জন্য কিনেছেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের জমি। মাত্র দেড় বছর সময়ের চেয়ারম্যান কোটি কোটি টাকা কোথায় পেলেন?’—চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মকলেছুর রহমান ওরফে শিলনের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন তাঁরই এক সময়ের সহযোগী যুবলীগ কর্মী কামাল হোসেন।

গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তোলেন কামাল হোসেন। তিনি চেয়ারম্যানের মাদক কারবার ও অবৈধ আয়ের বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেন। তাঁকে মাদক ব্যবসা করতে বাধ্য করা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এর আগে ৬ জুলাই রাতে আলমডাঙ্গায় সাংবাদিক ইউনিট কার্যালয়ে একই অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।

মকলেছুর রহমান ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। আর সংবাদ সম্মেলন করা কামাল হোসেন একই এলাকার বাসিন্দা ও যুবলীগের কর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেন দাবি করেন, তিনি কৃষিকাজ করতেন। চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করতেন। মকলেছুর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর (কামাল) হাত দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাদক পাঠাতে চাপ দিতেন। একদিন তাঁকে দিয়ে কেদারনগর গ্রামে মাদক পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই র‍্যাব পৌঁছে যায়। এরপর তাঁর নামে থানায় মামলা হয়। মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কামাল দাবি করেন, বন্দী থাকার সময় চেয়ারম্যান কারাগারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। চেয়ারম্যান তখন বলেন, ‘আমি তোকে বের করতে পারি, যদি আমার কথা শুনিস। আমার কথা মতো চললে পুলিশ তোকে ছুঁয়েও দেখবে না। যদি তোর নামে মামলা হয় তার সব খরচ আমি করব, না হলে জামিন হতে দেব না।’

যুবলীগ কর্মী কামালের ভাষ্য, কারাগার থেকেই চেয়ারম্যানের কথায় রাজি হয়ে যান তিনি এবং আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন। এরই মধ্যে আব্বাস নামের এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাঁর (কামাল) নাম বলেন। মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান তাঁর কাছ থেকে এ সময় ৩০ হাজার টাকা নেন তিনি। এমন অবস্থায় কামাল মাদক ব্যবসা করতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় অত্যাচার। তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কামাল হোসেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে গতকাল বিকেলে একাধিকবার কল করা হয়। কল পেয়ে তিনি কেটে দেন, তবে ফিরতি কল দেননি।

এর আগে ৬ জুলাই রাতে আলমডাঙ্গায় কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করলে চেয়ারম্যান পরের দিন রাতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, প্রায় আড়াই মাস ধরে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে অনেক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এ কারণে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি একাধিক মামলার আসামি কামাল হোসেন তাঁর (চেয়ারম্যান) ওপর ক্ষুব্ধ হন। তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ও নিজে বাঁচার জন্য সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।