ময়মনসিংহে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন, আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা

ময়মনসিংহ নগরের গুলকিবাড়ি এলাকায় বহুতল ভবনের কাজ চলায় পাঁচতলা ভবন হেলে পড়েছে। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ নগরে নির্মাণাধীন ভবনের পাশে পাঁচতলা একটি ভবন হেলে পড়েছে। ওই অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে দেন। এতে আশপাশের এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ রোববার সকালে বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে তাঁদের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।

হেলে পড়া ভবনটি ময়মনসিংহ নগরের গুলকিবাড়ি বাইলেন এলাকায় অবস্থিত। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভবনের প্রবেশমুখে কিছু জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। ভবনটি হেলে পেছনের ১৬ তলা একটি বহুতল ভবনের দিকে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচতলাবিশিষ্ট ‘শাকিল ম্যানসন’ নামের বাড়িটির মালিক লন্ডনপ্রবাসী এ এস এম রিয়াজুল আমিন। তবে বাড়ির দেখভাল করেন রিয়াজুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। পাঁচ শতক জমিতে ২০১১ সালে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে চারতলা সম্পন্ন হলেও সম্প্রতি পঞ্চম তলার কাজ শুরু হয়, যা সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। বাসার ১০টি ইউনিটের মধ্যে আটটি ইউনিটে ভাড়াটেরা বসবাস করতেন।

পাশে গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের ১৩ তলা ‘কাজীবাড়ি’ ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। প্রায় ছয় মাস ধরে পাইলিং শেষে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি সরানো হচ্ছিল। গতকাল ভবনের সামনে ও পাশের অংশে ফাটল দেখা দিলে আতঙ্ক শুরু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।

ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার জুলহাস উদ্দিন বলেন, পাইলিং শেষে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। এতে পাশের পাঁচতলা ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। ভবনটিতে অনেক বাসিন্দা থাকায় তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাসার মালিককে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীর সহযোগিতা নিতে। সিটি করপোরেশন যদি বলে, ভবন ব্যবহার করা যাবে এবং কোনো ঝুঁকি নেই, তবেই লোকজন ফিরে যেতে পারবেন। বাসার ভেতরে থাকা ভারী মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিং কোড মেনে যদি ভবন করা হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বাসিন্দারা ভবনের ভেতর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। আনন্দ মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শাহ মো. জুয়েল বলেন, ‘হঠাৎ গতকাল সন্ধ্যায় ফাটল দেখা দেওয়ায় জরুরি কাগজপত্র নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। রাতভর উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আজ বাসা থেকে মালামাল নিয়ে শ্বশুরবাড়ি রেখেছি, পরে নতুন বাসায় উঠব। হঠাৎ এই ভোগান্তি হলেও বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি, এটা স্বস্তির।’

হেলে পড়া ভবনের দেখভালকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল মাগরিবের নামাজের পর ফাটল বেশি লক্ষ করি। দুই দিন ধরে হালকা ফাটল দেখা যাচ্ছিল। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটায় এমন হয়েছে। বেশি ফাটল দেখে ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে জানাই। আমি বিল্ডিং কোড অনুযায়ী তিন ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন করেছি, কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনটি কোনো জায়গা ছাড়ছিল না। আমার সীমানাপ্রাচীরও পাইলিং করার সময় ভেঙে ফেলেছে। সরকারের কাছে আবেদন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। এত সরু এলাকায় কীভাবে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া হলো, তা ভাবতে হয়। আমার ভবনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় গ্রিনল্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেডের নির্মাণাধীন ভবনে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম বলেন, ‘নির্মাণকাজ চলাকালে গতকাল সন্ধ্যায় পাশের ভবন হেলে পড়ায় আমাদের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছিল। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী চারপাশে জায়গা ছাড়ার কথা। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিল্ডিং কোড না মেনে কাজ করায় এমন হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, আজ দুপুরের পর হেলে পড়া ভবন পরিদর্শন করা হবে। সবকিছু যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।