সহপাঠীর মৃত্যুর পর একাডেমিক কার্যক্রম ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় চার দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেলে ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকারের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চার দফা দাবিতে একাডেমিক কার্যক্রম এবং সব ধরনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেল সাড়ে চারটায় কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

দাবিগুলো হচ্ছে একাডেমিক কম্বাইন্ড সিস্টেম বাতিল করতে হবে। পূর্বের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পরিচালিত একাডেমিক সিস্টেমে ব্যাক করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা সাপেক্ষে সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের জন্য সুনির্দিষ্ট একাডেমিক নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে এবং যেকোনো ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন হলে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য প্রকাশ করতে হবে। যেকোনো নিয়ম নীতিমালা প্রণয়নের পূর্বে নীতিমালা বোর্ডে সরাসরি সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের প্রশাসনের পক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে হেলথ সেন্টার এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎসকে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব দাবি মানার আগপর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম এবং ক্যাম্পাসের সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিবাজি রয় ও সালমান সাব্বির। তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের দাবিগুলোর সঙ্গে সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট তাদের একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ধ্রুবজিৎ কর্মকার (২৩)। গতকাল রোববার দুপুরে কলেজের আবাসিক অমর একুশে হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পাশের টেবিলে ডায়েরিতে লেখা শেষ নোট। তাতে লেখা, ‘স্যরি মা-বাবা। আমি ধ্রুবজিৎ, সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কার্ডের পিন (...), টাকাগুলো মাকে দিয়ে দিও। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। পরেরবার ফার্মেসি নিয়েই পড়বো। এত চাপ আমার পক্ষে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। বিদায়। হরেকৃষ্ণ।’ তিনি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মনোতোষ কর্মকার ও সুপ্তি কর্মকারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট।

ধ্রুবজিতের সহপাঠীরা জানান, কলেজের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। রোববার সম্ভাব্যতা ও পরিসংখ্যান (প্রোবালিটি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস) বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই হলে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক খলিলুর রহমান অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ধ্রুবজিতের খাতা ও প্রবেশপত্র জমা নিয়ে নেন। এই ক্ষোভে আত্মহত্যা করে ধ্রুবজিৎ—এমনটি জানান সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রওনক আরা চৌধুরী।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা দেড়টার দিকে ধ্রুবজিতের মরদেহ কলেজ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখান থেকে বড় ভাই শুভজিৎ কর্মকার মরদেহ নিয়ে যান গ্রামের বাড়িতে। ধ্রুবজিতের মৃত্যুর পর তাঁর সহপাঠী ও কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কম্বাইন্ড সিস্টেম বাতিলের দাবি তোলেন।

আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, ‘ধ্রুবজিৎ তাঁর সুইসাইড নোটে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এডুকেশন সিস্টেমটাকে দায়ী করে গেছেন। কলেজে শিক্ষকেরা কোর্স শেষ করতে না পারলেও সম্মিলিতভাবে পরীক্ষার তারিখ দেওয়ায় জোরপূর্বক পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রতিটা কলেজে এক বিষয়ে একেক শিক্ষক ক্লাস নেওয়ায় একেকজন একেক বই ফলো করেন। প্রশ্নপত্রে দেখা যায়, এক সেমিস্টারের প্রশ্ন অন্য সেমিস্টারে দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।