৯ মাস পর জানা গেল, উদ্ধার করা হাড়গুলো ছিল নিখোঁজ আল আমিনের

নিহত কিশোর আল আমিন (১৭)
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বিলসিংহনাথ এলাকার ছাইভাঙ্গা বিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর মানুষের খুলি, কোমরের হাড়, হাত ও পায়ের হাড় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সেগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর টেস্টের প্রতিবেদন আসে। তখন জানা যায়, লাশটি পাশের রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার আল আমিন মোল্লার (১৭)।

পরিচয় শনাক্তের পর পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি চাপাতি। গ্রেপ্তার দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। শনিবার বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ আয়োজন করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, আল আমিন বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আকিদুল মোল্লার ছেলে। তার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর এ হত্যার সঙ্গে জড়িত খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেনকে (২৫) গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত দুইটার দিকে মো. মনির শেখকে (২০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী খর্দ্দ মেগচামী খাসকান্দি গ্রামের কাসিম মোল্লা। তিনি মারা গেছেন। কাসিম মোল্লা সুদে টাকা খাটাতেন। তাঁর কাছ থেকে ১০ বছর আগে আল আমিনের বাবা আকিদুল মোল্লা ১০ হাজার টাকা নেন। সুদে-আসলে ওই টাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হয়েছে বলে দাবি করেন কাসিম মোল্লা। তবে আকিদুল মোল্লা তাঁকে ৩৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকার জন্য আকিদুলকে চাপ দিতে থাকেন কাসিম মোল্লা। টাকা না পেয়ে তিনি আকিদুলকে নানা হুমকিও দেন।

হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন
ছবি: প্রথম আলো

আলি আমিন বালিয়াকান্দিতে একটি মুরগির খামারে কাজ করত। তার সহযোগী ছিলেন আলমগীর হোসেন ও মো. মনির শেখ। আলমগীর হোসেন ও মো. মনিরের সহায়তায় কাসিম মোল্লা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিতভাবে আল আমিনকে ছাইভাঙ্গা বিলে নিয়ে যান। সেখানে তাকে হত্যা করে টুকরা টুকরা করে কেটে একটি বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দেন।

পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, আল আমিন নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমে এ ব্যাপারে রাজবাড়ী আদালতে মামলা হয়। তদন্ত করে রাজবাড়ী সিআইডি। তবে তারা বেশি দূর এগোতে পারেনি। ইতিমধ্যে কাসিম মোল্লা মারা যান। পরে মধুখালী থেকে হাড়গোড় উদ্ধারের পর মধুখালী থানার এসআই (উপপরিদর্শক) মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবদুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) তালাত মাহমুদ শাহেনশা, সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) শাকিলুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মিজানুর রহমান, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ হান্নান মিয়া জানান, শনিবার বিকেলে এ হত্যা মামলার দুই আসামি আলমগীর ও মনির ফরিদপুরের ৫ নম্বর আমলি আদালতে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ কুমার বসাকের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।