ধামইরহাট সোয়া ২ কোটি টাকায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পড়ে আছে

২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়।

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনের পর চার বছর পার হয়েছে। ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা ভবনটি এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে না। চার বছর ধরে অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ভবনটি ক্রমেই জৌলুস হারাচ্ছে। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় যে দোকান ঘরগুলো করা হয়েছে, সেগুলোও এখন পর্যন্ত বন্ধ পড়ে আছে।

সারা দেশের মতো নওগাঁ জেলা ও ১১ উপজেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় কমিটি নেই। এ অবস্থায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। অন্যদিকে ধামইরহাটসহ জেলার ১১ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। তিন বছর পর পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয় না।

আমাদের মতামত উপেক্ষা করে ভবনটি উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গ্রামের মধ্যে গিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
আবদুর রউফ মণ্ডল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার

ধামইরহাট উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৬ সালের সালে ২ নভেম্বর ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ধামইরহাট-নজিপুর সড়কের পাশে উপজেলার উমার ইউনিয়নের বিহারীনগর এলাকায় ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালে ২৬ ডিসেম্বর নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে নওগাঁ জেলা কমপ্লেক্স ভবন ও ধামইরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনসহ জেলার ১১টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন উদ্বোধন করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটিতে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা মারা আছে। ভবনের বাইরের অংশের দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় শেওলা পড়েছে। ভবনটির সামনের বারান্দার অংশে দেওয়া কাচ দিয়ে তৈরি ছাউনি ভেঙে গেছে। ভবনের সামনের অংশের চত্বরে ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধাইরহাট উপজেলা সদরের বাজার এলাকায় ধামইরহাট থানার বিপরীতে একটি সরকারি ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপজেলা সংসদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। ওই স্থানটি উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা চেয়েছিলেন সেখানেই অথবা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভবন করা হোক। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর প্রশাসন থেকে ভবন দুটি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝে দিতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা সেটি ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানান।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার আবদুর রউফ মণ্ডল বলেন, ‘ভবনটিতে বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ভবনটি উপজেলা সদর থেকে দূরে এবং প্রত্যন্ত গ্রামে মাঠের মধ্যে ভবনটি হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে যেতে চান না। মুক্তিযোদ্ধা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হলে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা পরিষদ চত্বর কিংবা উপজেলা সদর বাজার এলাকায় নির্মাণের পক্ষে মত দেন। আমাদের মতামত উপেক্ষা করে ভবনটি উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গ্রামের মধ্যে গিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এখন দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ভবনটি পড়ে আছে।’ এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার ধামইরহাটের ইউএনও আবু হোসেন বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় দুই দিন আগে যোগ দিয়েছি। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি কী অবস্থায় আছে কিংবা কী সমস্যা, এ ব্যাপারে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’