চার বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তি নারী নির্যাতন মামলার আসামি

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট মারা যান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী উচনা গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী পরি বানু। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের করা একটি মামলায় তাঁকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের নির্দেশে পাঁচবিবি থানা–পুলিশ ৫ আগস্ট মামলাটি তালিকাভুক্ত করে। এ মামলায় পরি বানুর স্বামী ও ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।

একই উপজেলার এক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি করেন। এরপর পুলিশি তদন্তে চার বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়টি উঠে আসে। এতে অবাক হয়েছেন এলাকার লোকজন।

জানতে চাইলে পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেব আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে এজাহারে এক ব্যক্তির নাম পেয়েছি, যিনি ২০১৮ সালে মারা গেছেন। মামলাটি তালিকাভুক্ত করার আগে পুলিশের তদন্ত করার সুযোগ ছিল না। এটি লজ্জাজনক ঘটনা। এ লজ্জা মামলার বাদীর।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উপজেলার একটি গ্রামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৬) মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন একই উপজেলার ধরঞ্জী উচনা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. জনি (২৩)। ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবও দিতেন তিনি। এর প্রতিবাদ করলে চলতি বছরের ১০ মে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান জনি। সেখানে মাওলানা ডেকে দুজনের বিয়ে পড়ানো হয়।

পরে জনি ওই ছাত্রীকে ১০ মে থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত বাড়িতে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এতে তাঁর মা-বাবা তাঁকে সহায়তা করেন। এরপর বিয়ে নিবন্ধন করার কথা বলেও তা না করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় গত ২৭ জুলাই জয়পুরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জনি, তাঁর বাবা শহিদুল ইসলাম ও মা পরি বানুকে আসামি করে মামলার আবেদন করেন ওই ছাত্রীর বাবা। আদালতের নির্দেশে পাঁচবিবি থানা–পুলিশ ৫ আগস্ট মামলাটি গ্রহণ করে। ওই দিনই পুলিশ মামলার প্রধান আসামি জনিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

তবে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০২১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে জনির বিয়ে ঠিক হয়। একজন মাওলানা ডেকে তাঁদের বিয়ে পড়ানো হয়। ওই ছাত্রীর বয়স তখন ১৮ বছরের কম হওয়ায় বিয়ে নিবন্ধন করা যায়নি। বিয়ের পর জনি তাঁর শ্বশুরের কাছে যৌতুকের দাবি করেন। তখন ওই ছাত্রীর পরিবার বিয়ে নিবন্ধন করার জন্য জনিকে চাপ দেন। তবে জনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন ৫০ হাজার টাকা দিলে বিয়ে নিবন্ধন করা হবে বলে জানান। এটি নিয়ে দুই পরিবারে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

গত ঈদুল ফিতরে জনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি যান। সেখানে তাঁকে আটকে রেখে বিয়ে নিবন্ধন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। জনি বিয়ে নিবন্ধন না করে চলে আসেন। এরপর ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও এতে সহায়তার অভিযোগে মামলা করা হয়।

ধরঞ্জী উচনা গ্রামের লোকজন বলেন, জনির মা পরি বানু চার বছর আগে মারা গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্টারেও তাঁর মৃত্যুর তারিখ ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট বলে উল্লেখ রয়েছে।

জানতে চাইলে মামলার বাদী বলেন, ‘উকিল (আইনজীবী) জনির মা-বাবার নাম–ঠিকানা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা নাম-ঠিকানা বলেছি। জনির মাকে আসামি করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’

বাদীপক্ষ যেভাবে বলেছে, সেভাবে মামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর জানতে পারি, ৩ নম্বর আসামি চার বছর আগে মারা গেছেন। এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি সংশোধন করে আদালতে প্রতিবেদন দেবেন।’

জানতে চাইলে জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌঁসলি নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বাদীর ভাষ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে মামলা দাখিল করেন। বাদী যদি মামলায় ভুল তথ্য দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে আসামি করেন, তাহলে এর দায় তাঁর। অসত্য ও ভুল তথ্য দেওয়া অপরাধ। এ জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।