রংপুরে ঘন কুয়াশার মধ্যে বেপরোয়া গতিতে যান চলাচল, প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রশিদপুর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে আজ শনিবার সকালে একে একে সাতটি যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশার মধ্যে রংপুরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। এতে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া গতি কমাতে সতর্ক করলেও চালকেরা নির্দেশনা মানছেন না বলে অভিযোগ হাইওয়ে পুলিশের।

আজ শনিবার সকালে মিঠাপুকুর উপজেলা রশিদপুরে ঘন কুয়াশার কারণে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একে একে সাতটি যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এ ঘটনায় ১৪-১৫ জন আহত হয়েছেন।

বড়দরগাহ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রংপুরগামী একটি ট্রাককে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দেয়। পরে একে একে চারটি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মিনি ট্রাক ধাক্কা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-কুড়িগ্রাম ও রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-কুড়িগ্রাম ও রংপুর-বদরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় ৫ জন নিহত হন।

গত এক সপ্তাহে ঘন কুয়াশার কারণে রংপুরে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। বেপরোয়া গাড়ি চলাচল ও ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পীরগঞ্জের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ভোরে ৪ হাত দূরে কিছু দেখা যায় না। কিন্তু গাড়িগুলো শোঁ শোঁ করে চলে যায়। দুর্ঘটনার ভয়ে সড়কের পাশের বাসিন্দারা সড়কে যেতে ভয় পান।

রংপুর অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, ঘন কুয়াশা হলে গাড়ি ধীরে চালানোর নিয়ম, কিন্তু চালকেরা তা মানছেন না। মহাসড়কে একটি গাড়ি থেকে দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ গজ থাকার নিয়ম, কিন্তু গাড়িগুলো কোনো দূরত্বই রাখতে চায় না। এ কারণে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে অন্য গাড়িগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে।

রংপুর-ঢাকা সড়কে চলাচল করা একজন চালকের দাবি, ধীরে গাড়ি চালালে অনেক সময় দূরপাল্লার যাত্রীরা ধৈর্যহারা হন। তাঁরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে চাওয়ায় অনেক সময় দ্রুত গাড়ি চালাতে হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক গোলাম সাজ্জাদ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশার মতো দুর্যোগের সময় কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে, তার প্রশিক্ষণ নেই চালকদের। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ভারী গাড়ির চালক হিসেবে যাঁরা লাইসেন্স পাচ্ছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ নেই। তাঁরা সচেতন নন। চালককে প্রশিক্ষিত না করে সড়কে গাড়ি চালাতে দিলে এসব দুর্ঘটনা থামানো যাবে না।

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের রংপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ভোরে ঘটছে। ঘন কুয়াশা ও দ্রুতগতি এর কারণ। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন ফ্লাইওভারের পাশে যাত্রী ওঠানো ও নামানো কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁরা সচেতনতার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও কাজ হচ্ছে না। কোনো দুর্ঘটনা হলে তাঁরা নিয়মিত মামলা করছেন।