মিজান মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। ভাড়া করা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালিয়ে সেই আয় থেকে বৃদ্ধ মা–বাবা, স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চালান তিনি। কিছুদিন আগে নিজের জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি পুরোনো স্মার্টফোন কেনেন তিনি। একদিন ওই মুঠোফোনের নম্বরে থানা থেকে কল আসে। পুলিশ জানতে চায়, এটি একজনের হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোন, তিনি কোথায় পেলেন? সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনটি নিয়ে থানায় চলে যান মিজান। পুলিশকে তিনি জানান, একই এলাকার একজনের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকায় এটি কিনেছিলেন তিনি।
জগন্নাথপুর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মে উপজেলা বাউল কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল পারন নিজের ব্যবহৃত স্মার্টফোন হারিয়েছে উল্লেখ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোনটি ভবানীপুর গ্রামের মিজান মিয়ার কাছে আছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ মিজানকে কল দেওয়ার পর তিনি নিজেই মুঠোফোনটি নিয়ে থানায় হাজির হন। মিজানের কথার সত্যতা পায় পুলিশ। পরে মুঠোফোনটি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ওসি বলেন, ইজিবাইকচালক মিজান খুব কষ্টে মা–বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কলকলিয়া ইউনিয়নের এক যুক্তরাজ্যপ্রবাসীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। ওই প্রবাসী মিজানকে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর সোমবার রাতে মিজানের হাতে সেটি তুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে মিজানের মতো এমন সৎ ও দায়িত্ববান ছেলে কম আছে। মিজান যাতে নিজের গাড়ি চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে পারে, সে জন্য আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
গাড়ি পেয়ে ইজিবাইকের চালক মিজান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন গাড়ির ভাড়া বাবদ ৩৫০ টাকা দিয়ে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হতো তাঁর। এ দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে খুব কষ্ট হতো। এখন নিজের গাড়ি হওয়ায় প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হবে। গাড়ি কিনে দেওয়া প্রবাসী ও ওসির প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতার কথা জানান তিনি।