‘দ্রব্যমূল্য বাড়ায় শান্তিতে নেই ক্রেতা–বিক্রেতা কেউই’
প্রায় প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অথচ আয় বাড়েনি সাধারণ মানুষের। ফলে সংসার খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এখন চাইলেও আগের মতো খরচ করতে পারছেন না মানুষজন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করে আনছেন অনেকেই। এতে খুচরা বিক্রেতা তথা ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। তাঁদের একদিকে যেমন সংসার খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে বিক্রি কমায় কমেছে আয়ও। এখন তাই ক্রেতা–বিক্রেতা কেউই শান্তিতে নেই।
সিলেট নগরের বারুতখানা মোড়ের মুদিদোকানি মো. উমেদুর রহমান (৫২) কথাগুলো বলছিলেন। আয় কমলেই খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন তাঁর মাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার আয় হয়। তা দিয়েই ৮ সদস্যের পরিবারের খরচ চালিয়ে নিতে হয়। আগে প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি আয় হতো।
শহরতলির বটেশ্বর এলাকায় নিজের বাসা আছে উমেদুর রহমানের। দুই সন্তান পড়াশোনা করছে। প্রতি মাসে দোকানভাড়া ৬ হাজার এবং দোকানে যাতায়াত বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা দিয়ে বাসা ও দোকানের বিদ্যুৎ বিলসহ সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাতে হয়।
উমেদুর বলেন, একটা সময়ে ব্যবসা করে কিছু টাকা জমাতে পারলেও এখন উল্টো প্রায়ই ধারকর্জ করতে হয়। ছোট–বড় কোনো ব্যবসায়েই আর শান্তি নেই।
শুধু উমেদুর রহমান নয়, প্রায় ব্যবসায়ী একই রকম কথা বলছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আম্বরখানা এলাকায় সবজি ও মাছ কিনতে এসেছিলেন মঞ্জুর আহমদ। তাঁর বাসা শহরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায়।
পেশায় বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে এখন বাধ্য হয়েই ব্যয় সংকোচন করে কোনোমতে চলতে হচ্ছে। আগে যেখানে রিকশায় যেতাম, এখন হেঁটেই যাচ্ছি। এরপরও আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে চলতে হিমশিম খাচ্ছি।’
সিলেট নগরের মহাজনপট্টি এলাকার একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী শাহনুর মিয়া (৩৪)। তাঁর মাসিক আয় ৭ হাজার টাকা। শহরতলির শাহপরান এলাকায় নিজস্ব একটা বাসা থাকায় ভাড়া থাকতে হয় না।
শাহনুর মিয়া বলেন, সীমিত আয় করার পরও কয়েক মাস আগে মোটামুটি সংসারের খরচ চালিয়ে নিতে পেরেছেন। এখন দ্রব্যমূল্য মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় চার সদস্যের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। যে হারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে, তাতে রীতিমতো আতঙ্কে আছেন তাঁর মতো স্বল্প আয়ের মানুষজন।
গতকাল সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম প্রতি কেজিতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বেকারি বিস্কুট প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকায়। মাছের দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হতো ৩৮ টাকা থেকে ৪২ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে চাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ৩ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে।
পনিটুলা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী নিখিল ঘোষ (৬০) বলেন, ‘১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এমন কঠিন সময় আর দেখিনি। বাজারে অস্থিরতা চলছে, হাহাকার চলছে।’ মদিনা মার্কেট এলাকার মেসার্স পিস মদিনা ডিমের আড়তের স্বত্বাধিকারী আমির আলী (৬৪) বলেন, গত সপ্তাহেও দৈনিক তাঁর দোকানে ৩ হাজার পিস ডিম বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০টি থেকে ১ হাজার ৭০০টি।
এখন পাইকারি বাজার থেকে সবজি আগের চেয়ে কম কেনেন বলে জানিয়েছেন মদিনা মার্কেট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া (৫৬)। তিনি বলেন, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। আগের তুলনায় মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় একটি পোলট্রি ফার্মের কর্মচারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তেলের দাম না কমলে কুনতার দামই কমত না। তেলের দাম বাড়ায় সব জিনিসের দাম বাড়ছে।’