‘দেশপাগল মানুষটা সবাইরে কান্দাইয়া চলি গেল’

বেইলি রোডের আগুনে নিহত আতাউর রহমানকে দাফনের জন্য কবর খনন করা হয়েছে। শুক্রবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানেছবি: প্রথম আলো

‘এক সপ্তাহ আগে বাড়িত আইয়া গেছে। রাতে থাকছেও। প্রায়ই দেশে আইত। বলত, “আমেরিকায় মন টিকে না ভাই।” আমেরিকায় স্ত্রী-মেয়েরে রাখিয়া দেশের টানে আইয়া পড়ত। দেশপাগল মানুষটা সবাইরে কান্দাইয়া চলি গেল।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম খান। রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনে তাঁর স্বজন ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ওরফে শামীম নিহত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার কফি পান করতে দুজনকে সঙ্গে নিয়ে আতাউর রহমান ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পর সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

আতাউর রহমানের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। তিনি কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দেখা গেছে, টিনশেডের পাকা লম্বা একটি ঘর। আতাউরের স্ত্রী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় রুপই বিবি নামের স্থানীয় এক নারী বাড়িটি দেখাশোনা করছেন। বারান্দায় বসে তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। উঠানে চেয়ারে বসে লাশের অপেক্ষা করছেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা।

শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা বারিক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শামীম (আতাউর) সাব গরিবর বন্ধু আছলা। গরিব মানুষরে খুব ভালা পাইতা। এলাকায় আইলে সবার খোঁজখবর নিতেন। খালি বাড়ি মানুষে গমগম করত। একজন আপন জনরে আমরা হারাইলাম।’

আতাউর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

আতাউরের কবর খনন ও জানাজার প্রস্তুতি দেখতে ছুটে আসেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আতাউর সাহেব একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতিতে একটা বড় শূন্যতার সৃষ্টি হলো। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশতের উচ্চ মাকাম দান করেন।’

স্বজনেরা জানান, পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়া শেষ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কুলাউড়া পৌর শহরের নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে শ্রীপুর জালালিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।

আতাউরের ভাগনে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মঈনুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আতাউর রহমান ২০০১ সালে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের মাসখানেক আগে দেশে ফেরেন। রেস্তোরাঁয় থাকতে মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন বিকট শব্দে ধোঁয়ায় চারপাশ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আতাউরের সঙ্গে থাকা দুজন অন্যদের সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের ছাদে ওঠেন। কিন্তু তিনি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। পরে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, রাতে প্রায় চার ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আতাউরের লাশ পাওয়া যায়। তাঁর শরীরে কোনো ক্ষত দেখা যায়নি। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে তিনি মারা যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাতেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।