উপরের বাঁ দিক থেকে মকবুল হোসেন,এ কে এম আছাদুর রহমান ,সুলতান মাহমুদ খান ,শুভাশিষ পোদ্দার ও জুলফিকার রহমান

দু-এক দিনের মধ্যেই দেশের জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে আগাম প্রচারও চালাচ্ছেন কেউ কেউ।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এ কে এম আছাদুর রহমান। দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো ছাড়াও ভোটারদের কাছে গিয়ে দোয়া প্রার্থনাসহ নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সুলতান মাহমুদ খান। আলোচনায় আছেন বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশিষ পোদ্দার ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান। সেই সঙ্গে জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

মকবুল হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। বয়সে তিনি অন্যদের চেয়ে জ্যেষ্ঠ। দেড় দশক ধরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে আছেন তিনি। মকবুল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। জেলা পরিষদের চেয়ার পেয়ে ভালো আছি। চেয়ারম্যান পদে দলের কাছে আবার মনোনয়ন চাইব। জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন দিলে ভবিষ্যতেও দায়িত্ব পালন করব।’

চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান এ কে এম আছাদুর রহমান। তিনি সম্প্রতি বিলুপ্ত পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান-১–এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ সালে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৯ বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন।

জেলা প্রশাসক এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমে)।

আছাদুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ হয়ে বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগে যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। জেলা পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছি। আসছে নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতান মাহমুদ খান ১৯৯৬-৯৭ মেয়াদে সরকারি শাহ সুলতান কলেজছাত্র সংসদে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ৯৭-৯৮ মেয়াদে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুলতান মাহমুদ খান বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে প্রথমে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় ডাকবাংলো–সংলগ্ন পুরোনো মার্কেট ভেঙে বহুতল বিপণিকেন্দ্র নির্মাণ করে পরিষদে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শুভাশীষ পোদ্দার ১৯৮৭ সালে ছাত্রলীগের কাটনারপাড়া-শিববাটি আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালে আজিজুল হক কলেজ শাখা ও ১৯৯২ সালে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ শাখার সদস্য, ১৯৯৩-৯৪ সালে সরকারি শাহ সুলতান কলেজছাত্র সংসদের ভিপি, ১৯৯৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০২ সালে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ২০১৬ সালে জেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েছিলেন।

শুভাশিষ পোদ্দার বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জামায়াত-বিএনপির অসংখ্য হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। ৭৮টি মামলা হয়েছে। ২১ বার জেলে যেতে হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইব। জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’

জুলফিকার রহমান সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ১৯৯৭-৯৮ মেয়াদে বগুড়া সরকারি কলেজছাত্র সংসদের জিএস, ২০০২ সালে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি, ২০০৫ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হন। জুলফিকার রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে জেলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখব।’

এরই মধ্যে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলনে ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে কথা জানায়। জেলা প্রশাসক
এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমে)। বিগত নির্বাচনে ১৫ সদস্য নির্বাচিত হলেও এ সংখ্যা বাড়ছে।

বগুড়া জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সারা দেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এবার নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬২৫। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ভোটারদের মধ্যে আছেন উপজেলা পরিষদের ১২ জন চেয়ারম্যান, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান, বগুড়ার ১২ পৌরসভার ১২ জন মেয়র, ১৬০ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ১০৯ ইউপি চেয়ারম্যান এবং ১ হাজার ৩০৮ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য।