সমঝোতা বৈঠকে আন্দোলন স্থগিতের প্রস্তাব মানেননি চা-শ্রমিক নেতারা

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে তৃতীয় দিনের কর্মবিরতিতে চা–শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভুরভুরিয়া চা–বাগানে
প্রথম আলো

চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করেছে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। সমঝোতা বৈঠকে মালিকপক্ষ না থাকায় আন্দোলন স্থগিত না করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে এই বৈঠক বসে। বৈঠকে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দিসহ বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ৭ ভ্যালির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা মজুরি থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি করছি। আজ দুপুরে সমঝোতা বৈঠকের জন্য আমাদের শ্রমকল্যাণ দপ্তরে ডাকা হয়। বিকেলে আমরা বসি। শ্রমকল্যাণ দপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের ২৮ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। কিন্তু আমাদের শ্রমিকেরা সেটা মানবে না। তা ছাড়া মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে ছিলেন না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বৈঠক শেষে বৈঠক নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন চা–শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা আন্দোলনে গেলে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠক করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৮ আগস্ট তাঁদের সঙ্গে বসতে সময় চেয়েছেন। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন সেটা মানেনি।’

এই আন্দোলন শ্রম আইনবিরোধী। শ্রমিকেরা শ্রম আইনের বাইরে গিয়ে আন্দোলন করছেন। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকেরা ধর্মঘটে গেলে ১৪ দিন আগে লিখিতভাবে জানাতে হবে। সেটা তাঁরা করেননি।
মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, উপপরিচালক, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার)

নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই আন্দোলন শ্রম আইনবিরোধী। শ্রমিকেরা শ্রম আইনের বাইরে গিয়ে আন্দোলন করছেন। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকেরা ধর্মঘটে গেলে ১৪ দিন আগে লিখিতভাবে জানাতে হবে। সেটা তাঁরা করেননি। আমরা চেয়েছিলাম একটা সমাধান করতে। কিন্তু তাঁরা আমাদের সময় দেননি।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেট খালি থাকলে, প্রয়োজন পড়লে মানুষ আইনের বাইরে যায়। আমরা সেখানে আইন মেনেই আন্দোলন করছি। আমরা সাত দিন আগে দাবি না মানলে আন্দোলনে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। প্রায় ১৯ মাস ধরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে যখন হঠাৎ তেলের দাম বাড়ল, পরদিন থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা বাস বন্ধ করে ভাড়া বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করেন। এগুলো যদি আইন ভাঙা না হয়, আমাদেরটা কীভাবে হয়? চা-শ্রমিকেরা কী নিদারুণ কষ্টে আছেন, তা মালিকপক্ষ ও সরকারকে বোঝা উচিত। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল। কাল দাবি না মানলে শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলন হবে।’

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের ২৩১টি চা-বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন চা–শ্রমিকেরা।