শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে যাত্রীদের চাপ, দ্বিগুণ ভাড়া আদায়

অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের আসতে হচ্ছে যাত্রীদের। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শরীয়তপুর পৌর বাস টার্মিনালেছবি: প্রথম আলো

ঢাকা থেকে শরীয়তপুর শহরের দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। এ রুটে বাসের ভাড়া ২৭৭ টাকা। কিন্তু ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন। কিন্তু উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শরীয়তপুর কার্যালয় ও শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের মানুষ পদ্মা সেতু পারাপার হয়ে বাসে ঢাকায় যাতায়াত করেন। শরীয়তপুর পৌর বাসটার্মিনাল ও নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জের কদমতলা পর্যন্ত বাস চলাচল করে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওই পথে প্রতিদিন তিন শতাধিক বাস চলে। গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর একেকটি বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মানুষ বাসে চড়ে এ পথে যাতায়াত করেন। ঈদের ছুটিতে যাত্রীসংখ্যা আরও বেড়ে যায়। শরীয়তপুর শহর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। বিআরটিএ এ পথে বাসের যাত্রী ভাড়া ২৭৭ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতি ২৫০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেওয়া করে। তবে ঈদ কেন্দ্র করে গত শুক্র ও শনিবার যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

এখন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীদের বাসে উঠতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাত্রীদের চাপ বাড়ায় বাসের মালিক ও শ্রমিকেরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন।

যদিও গত বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির নেতারা ঈদের আগের ও পরের সাত দিন ভাড়া ৩০০ টাকা করার দাবি জানান। কিন্তু প্রশাসন তাতে সায় দেয়নি।

ঢাকার মিরপুরে একটি বিস্কুট কারখানায় কাজ করেন ডামুড্যার মেহেদী হাসান। তিনি আজ মঙ্গলবার শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের একটি বাসে করে যাত্রাবাড়ী থেকে শরীয়তপুর শহরে এসেছেন। তাঁর কাছ থেকে ৫০০ টাকা বাসভাড়া নেওয়া হয়েছে। মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বল্প বেতনে কাজ করি। সারা বছরের সঞ্চয় দিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করি। সেই কষ্টের টাকা যদি বাসের মালিক-শ্রমিকেরা রেখে দেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’

আজ সকালে সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন। তাঁদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে বাসভাড়া আদায় করা হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে বাসের জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসে ওঠার সময়ই পরিবহনশ্রমিকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৬০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হবে। উপায় না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে।

ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক জুয়েল ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় খালি বাস নিয়ে যেতে হচ্ছে। আসার সময় যাত্রী হলেও যাওয়ার সময় কোনো যাত্রী থাকেন না। তাই যাওয়া-আসার খরচ সমন্বয় করতে ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে।

শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের কারণে যাত্রীদের অনেক চাপ। ঢাকা থেকে আসার সময়ই অতিরিক্ত যাত্রী আছে। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা যাতে যাত্রাবাড়ীতে দাঁড়িয়ে না থাকেন, সেই কথা বিবেচনা করে শরীয়তপুর থেকে খালি বাস পাঠাতে হচ্ছে। সেতুর টোল, মহাসড়কের টোল, বিভিন্ন চাঁদা ও তেল খরচ সমন্বয় করতে ভাড়া বেশি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও তা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। আজ সকাল ১০টা দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৌর বাসটার্মিনালে টহল পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাছলিমা আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাবেন ম্যাজিস্ট্রেট। ঈদের ছুটিতে অনেকে বাড়ি গিয়েছেন। যাঁরা শরীয়তপুরে আছেন, তাঁরা কাজ করছেন।